• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

চাকরির কথা বলে টাকা নিয়ে ধরিয়ে দিতেন মানহীন ইলেক্ট্রনিকস পণ্য

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৩  

গোপালগঞ্জ শহরে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র ও বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ওয়ার্ল্ড মিশন টুয়েন্টিওয়ান লিমিটেড নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের দুই সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাদের আটকের খবর পাওয়ার পর সদর থানার সামনে ভিড় করে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা । 

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় অবস্থিত ওয়ার্ল্ড মিশন টুয়েন্টিওয়ান লিমিটেড অফিস থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে ওই দুই সদস্যকে আটক করে সদর থানা পুলিশ। এসময় ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।  

আটক দুই সদস্যরা হলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের গোপালগঞ্জ শাখার প্রধান শরীফ মুস্তাকিম ও সিফাত আহমেদ রনি। 

পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকদের টার্গেট করতেন তারা। ওই প্রতিষ্ঠানে দশ হাজার টাকারও বেশি বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের থেকে জামানত হিসেবে আগ্রীম ১০ হাজার করে টাকা নেয়। পরে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের চাকরি বা টাকা ফেরত না দিয়ে মানহীন ইলেক্ট্রনিকস পণ্য ধরিয়ে দেওয়া হত। গত দেড় বছর ধরে তারা এভাবে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। ইতোমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। 

এ নিয়ে সম্প্রতি গোপালগঞ্জের কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে এমন প্রতারণার অভিযোগ এনে পোস্ট করেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ওই প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযান চালানো হয়। 

এ নিয়ে হিমেল নামে এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে সে বলেন, আমাকে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকারও বেশি বেতনের চাকরি দেওয়ার কথা বলে জামানত হিসেবে দশ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে আমাকে বলে তাদের মাসিক কোনো বেতন নাই। একজন শিক্ষার্থী এনে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারলে সেখান থেকে কমিশন হিসেবে ছয়শ টাকা পাব। পরে আমি চাকরি করব না জানালে আমার টাকা ফেরত না দিয়ে আমাকে মানহীন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ধরিয়ে দেয়। এরা একটা প্রতারক চক্র। আমার মত আরও অনেকের কাছ থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

রিসাদ নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে দশ হাজার টাকা বেতনে চাকরির কথা বলে আমার থেকেও দশ হাজার টাকা জামানত নেয়। পরে ওই অফিসে গেলে তারা জানান বেতন পাব না। ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রত্যাশী একজন কে এনে দিতে পারলে কমিশন হিসেবে ছয়শ টাকা পাব। পরে আমি চাকরি করব না বলে জানালে আমাকেও মানহীন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ধরিয়ে দেয়। আমি আর ঝামেলা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসি। আজ তাদের আটকের খবর পেয়ে থানার সামনে এসেছি। 

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাসুদ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ ছিল। সম্প্রতি তাদের প্রতারণা  নিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে অনেকই পোস্ট করে। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ নজরে নিলে আজ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ দুই কর্মকর্তা শরীফ মুস্তাকিম ও সিফাত আহমেদ রনিকে আটক করি। এসময় তাদের কাছে বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে থানায় কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ দায়ের করেছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ