• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

পায়রায় বদলে যাবে বরিশাল বিভাগের চিত্র

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২১  

পটুয়াখালী কৃষি কলেজ, যাকে ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই সেটি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। এক কথায় গোটা বরিশাল বিভাগে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এটি। যাকে ঘিরেই দুমকি উপজেলাসহ আশপাশে আধুনিক কাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পায়রা নদী তীরবর্তী এ উপজেলার লেবুখালি ইউনিয়নটি অনেকটাই হাব এ পরিণত হয়। যে লেবুখালির ফেরি পার হয়েই বিভাগের সদর দফতর বরিশালের সঙ্গে দক্ষিণের ডজনখানেক উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনের কাজটি চলে আসছিল। যানবাহন চলাচল বাড়তে থাকলে গুরুত্ব পায় এই ফেরিঘাটটি। ফুটপাতের দোকানি থেকে হকারসহ বিভিন্ন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও ঘটে এ ফেরিঘাটকে কেন্দ্র করে। তবে দিন যতো এগুতে থাকে ফেরিঘাটটি ততোই সাধারণ মানুষ, পরিবহন চালকদের কাছে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই এর দুর্ভোগের চিত্র ফুটে উঠতো।
একসময় মানুষের মুখে মুখে চলে আসে লেবুখালির পায়রা নদীর ওপর কবে একটি সেতু হবে। সেই কথা একদিন বাস্তবে রূপ নিবে তাও যেন কেউ ভাবেনি। দ্বিতীয় বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১৩ সালের মার্চে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। এরপর নানান জটিলতা কাটিয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আজ ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর (রোববার) সকাল ১০টায় সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তথ্যানুযায়ী এটাই বরিশাল বিভাগের প্রথম বেশি (১৯.৭৬ মিটার) প্রস্থের চারলেনের সেতু। আর গোটা দেশের মধ্যে এই সেতুতেই প্রথমবারের মতো ‘ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম’ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন দুর্যোগ বা ওভারলোডেড গাড়ি চলাচলের ফলে ব্রিজের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, তার (ক্ষতির) পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।
পায়রাসেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হালিম জানান, এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে করা ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি বাংলাদেশে দ্বিতীয়।  

অপরদিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি সেতুর মতো এখানেও ২শ মিটারের লং লেন্থ স্প্যান রয়েছে। এই সেতুর কিছু বিশেষত্বের মধ্যে একটি হলো সব থেকে ‘ডিপেস্ট ফাউন্ডেশন’। ১৩০ মিটার পাইল বিশিষ্ট সেতু এটি, যা পদ্মাসেতুর ক্ষেত্রেও করা হয়েছে। তবে পদ্মাসেতুর আগে এটা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে পায়রা সেতুতে বদলে যাবে বরিশাল বিভাগের চিত্র। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। সেতুটিতে যান চলাচলের মধ্য দিয়ে এখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ব্যবসার প্রসার, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেনের মতে এ সেতু চালুর মধ্যদিয়ে পায়রা বন্দর, পর্যটন নগরী কুয়াকাটা, নির্মাণাধীন পটুয়াখালী ইপিজেডসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন মান পাল্টে যাবে। আগামী দিনে পটুয়াখালী দেশের অন্যতম একটি অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে আর্বিভূত বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, দক্ষিণ বাংলার মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের সেতু পায়রাসেতু। যা অত্যন্ত নান্দনিক নকশায় তৈরি করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এটি নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতি সাধিত হয়েছে। এ সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
আর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক-এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হয়। বরিশাল থেকে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় যেতে আগে পাঁচ পাঁচটি ফেরি ছিল। কিন্তু এখন আর তার একটিরও প্রয়োজন হবে না। নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ব্যবস্থায় সল্প সময়ে নিরাপদে পৌঁছানো যাবে সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যন্ত। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার এ উন্নয়নে বরিশাল-পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ