• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গাজায় বাড়ছে সংক্রামক ব্যাধি, উচ্চ ঝুঁকিতে শিশুরা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৪  

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা ও আগ্রাসনের সাত মাস পেরিয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে সেখানকার বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবনযাপনের ধরণ হয়ে গেছে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। দৈনন্দিন বর্জ্য, ত্রাণের প্যাকেট, সবই ফেলা হচ্ছে তাঁবু বা বসতবাড়ির ধারের কাছেই। এতে রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে বাতাসে। বাড়ছে সংক্রামক ব্যাধি। 

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দা আবু মোহাম্মদের তাঁবু থেকে এক দেড়শ মিটার দূরেই ময়লার ভাগাড়। সারাদিনই মাছি উড়ছে, প্রতিনিয়ত পচা দুর্গন্ধ আসে নিশ্বাসের সাথে। তিনি নিজের চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছেন সন্তানদের নিয়ে। 

আবু মোহাম্মদ বলেন, পোকামাকড় আর দুর্গন্ধে আমরা অতিষ্ঠ। এই ধরনের পোকা আমরা আগে কখনো দেখিনি। আর বড় বড় মশা, দেখলেই ভয় লাগে।

তিনি জানান, গাজার পৌর কর্তৃপক্ষ আগে বেশ দায়িত্বশীল ছিলো তাই নিয়মিত বর্জ্য পরিষ্কার করা হতো। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর নগর ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় যেখানকার ময়লা সেখানেই পড়ে থাকছে।

আমার ছয় বছরের একটি শিশু আছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এছাড়া আরও দুই সন্তান আছে। ওদের গায়ে বিভিন্নরকম চর্মরোগ হচ্ছে। কারো না কারো জ্বর লেগেই আছে। কিছুতেই সুস্থ রাখতে পারছি না ওদের। 

গাজার আরেক বাসিন্দা ইউসুফ হামাদ জানান, মধ্য গাজার আল জাওয়াইদা এলাকায় এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখা যায়নি। দিনের চেয়ে রাতে ঘুমানোর সময় মশা, কীট পতঙ্গ আর দুর্গন্ধে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় তাদের।

তিনি বলেন, এতো নোংরা পরিবেশে মানুষের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব না। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করবো তারা যেন এসে দেখে কি পরিস্থিতিতে বেঁচে আছে গাজাবাসী। 

ইউসুফ জানান, পরিবেশের কারণে নানা ধরনের ঝুঁকি বাড়ছে। এই আবর্জনা রোগ বালাই বাড়াচ্ছে। তার ওপর যদি দীর্ঘদিন এসব ময়লা, পলিথিন মাটির সঙ্গে মিশতে থাকে তাহলে ভূগর্ভস্থ পানিও দূষিত হয়ে যেতে পারে। আর এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তা অপূরণীয় বলে মনে করছেন তিনি। 

যুদ্ধ মানুষকে যতোটা কাতর করে রেখেছে, পারিপার্শ্বিক সমস্যাগুলো তুলে ধরার মানসিকতা আসলে কারোই নেই। তাই বলে এই সমস্যাগুলো সামনে আসা যে কম গুরুত্বপূর্ণ তা কিছুতেই নয়। আমাদের যা ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণে এক যুগও যথেষ্ট নয়। 

গাজায় ডায়রিয়া, কলেরাসহ পানি ও বায়ুদূষণ জনিত রোগ এখন প্রতি ঘরে ঘরে, আর এর জন্য দায়ী মূলত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পানযোগ্য খাবার পানির অভাব। এতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে পড়েছে শিশুরা। 

এর আগে গেলো বছরের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে ইসরাইলে এই দশকের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালায় গাজার হামাস সরকার। এর পরপরই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইল। 

ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন কয়েক হাজার গাজাবাসী। 

এ গণহত্যা বন্ধের আহবান জানিয়ে জাতিসংঘ বলছে, ইসরাইলি আক্রমণের ফলে গাজার জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার ৭০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। 

সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, গাজার ২২ লাখ অধিবাসী দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলে বিশ্বকে জবাবদিহি করতে হবে। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ