• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

ব্যর্থতা পুরো অস্বীকার করব না

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

দৈনিক গোপালগঞ্জ: নিমতলী বিপর্যয়ের পরও পুরান ঢাকা থেকে কেন রাসায়নিক দ্রব্যের স্থাপনা সরানো যায়নি?

মো. সামসুল আলম: এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করার উপযুক্ত লোক নই। তবে যেখানে এগুলো সরানোর কথা, সেই জায়গাটা পুরোপুরি প্রস্তুত করা যায়নি। আমি এটা জোর দিয়ে বলব যে নিমতলীর ঘটনার পরে পুরান ঢাকায় আমরা রাসায়নিক স্থাপনার ছাড়পত্র দিইনি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ: সাম্প্রতিক কালে কী ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? আপনাদের অধিদপ্তরের ব্যর্থতা অস্বীকার করবেন?

সামসুল আলম: গত সপ্তাহে মেয়র মহোদয় (সাঈদ খোকন) বেআইনি রাসায়নিক স্থাপনা উৎখাতে একটা বিশেষ অভিযানের উদ্বোধন করেছিলেন। সেখানে আমাদের তিন-চারজন কর্মকর্তা গিয়েছিলেন। পুরান ঢাকার কোথাও যাতে ৩০ ধরনের উচ্চমাত্রার দাহ্য পদার্থ না রাখা হয়, সেটা নিশ্চিত করাই ছিল লক্ষ্য। এর মধ্যেই ঘটনাটা ঘটে গেল। আমাদের ব্যর্থতার যে অভিযোগগুলোর কথা বলছেন, তার দায়দায়িত্ব আমরা একদম অস্বীকার করব না।

তবে পুরান ঢাকায় রাসায়নিক উপাদান ছাড়াও বিপজ্জনক পণ্যের কমতি নেই। সেখানে নানা ধরনের বর্জ্যেরও গুদাম রয়েছে। সে জন্য জনগণের সচেতনতা খুবই জরুরি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ: এই মুহূর্তে করণীয় কী?

সামসুল আলম: সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে কাপড়চোপড় ও লোহালক্কড়ের মতো নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসা ছাড়া আর সব ব্যবসা পুরান ঢাকায় বন্ধ করে দিতে হবে। ঘিঞ্জিপ্রধান পুরো এলাকাকে প্রধান আবাসিক এলাকা করতে হবে। তবে এটা করতে গেলে তাদের পুনর্বাসনের প্রশ্ন আসবে। রাসায়নিকের জন্য আলাদা মার্কেট করা যেতে পারে। পুরান ঢাকা নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ না করতে পারলে এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা দুরূহ থাকবে। সুদূরপ্রসারী কোনো একটা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব থাকলে এ–জাতীয় ঘটনা ঘটতে থাকার আশঙ্কা নাকচ করি না।

দৈনিক গোপালগঞ্জ: আপনি বলছেন যে নিমতলীর ঘটনার পরে আপনারা সব লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, তাহলে নতুন উদ্যোক্তারা কী করেন? চাহিদা কারা, কীভাবে পূরণ করেন?

সামসুল আলম: আমরা শুধু বন্ধই করিনি, অনেকগুলোকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জে নিয়েছি। সেখানে একটা কেমিক্যাল পল্লি গড়ে উঠেছে। কেমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন রয়েছে। আমি যত দূর জানি, মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে তাদের একটা বৈঠক হয়েছিল। তাঁরা বলেছিলেন, উচ্চমাত্রার দাহ্য পদার্থ তাঁরা রাখবেন না। আমাদের কাছে মেয়র উচ্চমাত্রার দাহ্য পদার্থের একটি তালিকা চেয়েছিলেন। সেই তালিকাটা আমরা সরবরাহ করেছি। নিমতলীর দুর্ঘটনার পরে ওই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

দৈনিক গোপালগঞ্জ: চকবাজারে তেমন উপাদান থাকার সম্ভাবনা আছে?

সামসুল আলম: থাকতে পারে। গত সপ্তাহে আমরা মাত্র কয়েকটা দোকানে যাই। আগামী রোববার আবারও যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এটা শেষ করতে পারলে হয়তো এই ট্র্যাজেডি আমাদের দেখতে হতো না। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে যা দেখতে পেয়েছি, নিচের তলায় (রাজ্জাক ভবনের) প্লাস্টিক দানা ছিল। দোতলায় বডি স্প্রের একটি গুদাম ছিল। শুনেছি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত। আবার একটা গাড়ির কথাও শুনতে পাচ্ছি। যেখান থেকেই এটির সূত্রপাত হোক, আমরা কারণ বের করতে পারব। গাড়ি থেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে কিংবা তার আগে কোনো ট্রান্সফরমার ফেটে যাওয়া আগুন ছড়িয়ে পড়ল কি না, সেটা ভালোভাবে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ: আপনাদের ভূমিকা কি যথেষ্ট? স্থায়ী সমাধান কী?

সামসুল আলম: আমাদের মাত্র তিনজন পরিদর্শক। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কারিগরি সহায়তা নিয়ে যেতে পারি। সরাসরি প্রতিহত করতে পারি না। আমি যেটা জোর দিয়ে বলব, রাসায়নিক দ্রব্য রাখার স্থাপনাগুলো স্থায়ীভাবে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। নইলে এর স্থায়ী সমাধান আশা করা যায় না।

দৈনিক গোপালগঞ্জ: আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে কখনো অনুরোধ করেছেন?

সামসুল আলম: ২০১৮ সালের প্রথম দিকে আমরা রাজধানী ঢাকার সবগুলো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে বেআইনিভাবে সিলিন্ডার গ্যাস 
মজুত ও সংরক্ষণ করা বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছিলাম।

দৈনিক গোপালগঞ্জ: আপনাদের পাল্টা চিঠির মাধ্যমে তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা জানিয়েছিল?

সামসুল আলম: না। তবে তারা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। আমরা কিন্তু তাদের সময় সময় স্মরণ করিয়ে দিই যে আপনাদের এসব ক্ষেত্রে কী ধরনের ক্ষমতা আইনে অর্পণ করা রয়েছে। এখতিয়ার নিয়ে অনেক সময় তাঁরা সচেতন থাকেন না।

দৈনিক গোপালগঞ্জ: কী ধরনের রাসায়নিকের কারণে চকবাজারের আগুন এতটা ভয়ংকর হতে পারল?

সামসুল আলম: মনে হচ্ছে এগুলো আমাদের পরিভাষায় নিয়ন্ত্রিত কেমিক্যাল ছিল। প্লাস্টিকের দানা, লুব্রিকেটিং অয়েল, মেশিন অয়েলের মতো অনেক কেমিক্যালস আছে, যা ছোটখাটো বিভিন্ন কারখানায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আগুন লাগলে এগুলো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ: আপনাকে ধন্যবাদ।

সামসুল আলম: দৈনিক গোপালগঞ্জ ধন্যবাদ।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ