• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সদর হাসপাতালেই যদি ডাক্তার না থাকে যাব কোথায়!

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৯  

ব্যাক পেইন এর সমস্যা নিয়ে দুইদিন ডাক্তার দেখাতে এসে শুনি ডাক্তার নেই। কবে কখন পাওয়া যাবে, তাও কেউ ঠিক মত বলতে পারছে না। জেনারেল হাসপাতালেই যদি নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া না যায় তবে, সাধারণ রোগীরা যাবে কোথায়? এমনটিই বলছিলেন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা হাসান সরদার নামে এক রোগী।
শনিবার (১৫জুন) সকাল ১০ টা থেকে ১টা পর্যন্ত হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, বাগেরহাট, পিরোজপুরসহ পাশবর্তী বিভিন্ন এলাকার রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেও ডাক্তার না থাকায় অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আর যারা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন, তারা হতাশ ওষুধ না পেয়ে। এমনকি বিভিন্ন টেষ্ট এর জন্য তাদের পাঠানো হচ্ছে আশপাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। লোকবল সংকট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকাসহ নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছে রোগীদের। যদিও হাসপাতালটিতে রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বিভিন্ন উন্নত মানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি রয়েছে।  
জানা গেছে, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালটিতে ৬১ জন চিকিৎসক নিয়োগের কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৩৯ জন। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে ২২টি পদ। আর যাদের নিয়োগ রয়েছে, তাদের অনেকেই আবার নানা কারণে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ফলে দূর-দুরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা পড়েন চরম ভোগান্তীতে।
 
এদিকে, হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগীদেরও অভিযোগের শেষ নেই। নিয়মিত ডাক্তার না আসা, নার্স ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার, খাবারে অনিয়ম, অপরিচ্ছন্ন, দালালদের উৎপাতসহ নানা অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনদের।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের গৃহবধূ কনিকা মন্ডল জানান, গত কয়েকদিন ধরে নাক ও কানের সমস্যায় ভুগছেন। হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসলেও ডাক্তারের দেখা পাননি। বরং তাকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
নড়াইলের কালিয়া থেকে আসা এক রোগী বলেন, এই হাসপাতালটি শুধু নামেই ২৫০ শয্যার। আসলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে যে মানের চিকিৎসা সেবা থাকার কথা, তার কিছুই এখানে নেই। গুরুতর অসুস্থ বা আহত হয়ে কখনো কোন রোগী এখানে আনা হলে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে তাকে ঢাকা অথবা খুলনা পাঠানো হয়। এর ফলে অনেক রোগীর পথেই মৃত্যু হয়। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হয়, প্রতিবাদ হয় কিন্তু কোন সমাধান হয় না। মূলত যাদের এটি দেখার বা সমাধান করার কথা, তারা নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য না দেখার ভান করে থাকেন।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে আসা এক রোগীর স্বজন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত তার এক নিকট আত্মীয়কে গত এক সপ্তাহ আগে এখানে ভর্তি করেন। কিন্তু হাসপাতালের খাবারের মান দেখে তিনি হতাশ। এছাড়া প্রয়োজনীয় সব ওষুধ তার কিনতে হচ্ছে ফার্মেসী থেকে। নিয়মিত ডাক্তার আসার কথা থাকলেও আসেন না। অনেক সময় প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় জানাতে নার্সদের কাছে গেলেও তাদের কাছ সহয়তা না পাওয়ার অভিযোগ তার। এছাড়াও দালালদের দৌরাত্ম্যে বিরক্ত তিনি।
 
পার্শবর্তী জেলা পিরোজপুরের নাজিরপুর থেকে ভাঙ্গা হাত নিয়ে গত ১৫ দিন আগে ভর্তি হন এক নারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক স্বজন জানান, ডাক্তাররা এর মধ্যে দুইবার অপারেশনের তারিখ পরিবর্তন করেছে। হাসপাতালের এক কর্মচারী বার বার তাদেরকে ক্লিনিকে অপরারেশন করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছেন। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন প্রতিকার পাননি তিনি। আর এতদিনেও অপারেশন না হওয়ায় চিকিৎসা খরচ বাড়ার পাশাপশি নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে জানান।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে যেসব সুযোগ সুবিধা থাকার কথা তার অনেক কিছুই এখানে আছে। দিনে দিনে আরো উন্নতি হচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, এখানে ৬১ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলে নিয়োগ আছে ৩৯ জনের। তাদের মধ্যে অনেকেই নানা কারণে কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারেন না।
এছাড়া শেখ সাহেরা খাতুন মেডিকেল কলেজের কয়েকজন ডাক্তার এখানে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা থাকলেও তারা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না। এমনকি কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনাও তারা মানছেন না। ফলে আমাদের বদনাম হচ্ছে। এছাড়া, এখানে উন্নত মানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি থাকলেও লোকবল ও যান্ত্রিক ক্রটির কারণে চাহিদা মত চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ