বেরোবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি দুই বছরেও

সম্মেলনের দুই বছরেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ হয়নি তিনটি হল শাখার কমিটিও। ফলে চরম বিভক্তি দেখা দিয়েছেনেতাকর্মীদের মধ্যে।

সংগঠন সূত্র জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। পরদিন (৫ এপ্রিল) আবু মোন্নাফ আল তুষার কিবরিয়াকে সভাপতি ও কামরুল হাসান নোবেল শেখকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য দুই সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হুসাইন।

এর আগে ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর মেহেদী হাসান শিশিরকে সভাপতি এবং মোস্তফা মাহমুদ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে প্রথমবারের মতো ১০ সদস্যের বেরোবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

এদিকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পদ প্রত্যাশীরা বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেও পদ-পদবি ছাড়াই পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাস ছাড়তে হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করতে পারায় বিদ্যমান কমিটির সভাপতি-সম্পাদককেই দায়ী করছেন তারা।

এদিকে, সাবেক কমিটির একাধিক নেতা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিতে সরব হয়েছেন। ছাত্রলীগের ওই অংশ ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। তারা সভাপতি-সম্পাদকের বাইরে আলাদা করে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এ অংশের নেতৃত্বে আছেন সাবেক কমিটির সহ-সম্পাদক ফয়সাল আজম ফাইন, সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, সাবেক কমিটির সদস্য মৃতীশ চন্দ্র বর্মণ।

কথা বললে সাবেক কমিটির সহসম্পাদক ফয়সাল আজম ফাইন জাগো নিউজকে বলেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে, হবে, বলেই দুই বছর পার করলেন বর্তমান কমিটির সভাপতি-সম্পাদক। কিন্তু কবে হবে কমিটি? কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। তাই আমাদের দাবি এ ব্যর্থ কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করা।

তবে বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তাদের আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। প্রায় ৮ মাস আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ তারা তালিকা জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিকে।

অন্যদিকে, এক বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল কমিটি। জানা গেছে, গত বছরের ৮ মে সালমা সাবিহা খুশিকে সভাপতি ও তানজিলা আফরিন পিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। তার পরদিন ৯ মে পোমেল বড়ুয়াকে সভাপতি ও মাহবুব আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের এবং হাসান আলীকে সভাপতি ও কাওসার আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে শহীদ মুখতার ইলাহী হল শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বছর পেরুলেও তা আর পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি।

হল কমিটি পূর্ণাঙ্গের ব্যাপারে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলেই হল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।

সংগঠন সূত্র জানায়, কমিটি পূর্ণাঙ্গ না থাকায় যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের ‘কেউ না’ বলে সহজেই দায় এড়িয়ে যান শাখা ছাত্রলীগ নেতারা। এজন্য হতাশ হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। তাছাড়া কমিটির সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তায় ছাত্রলীগে বাড়ছে শিবির-ছাত্রদলের সহজ অনুপ্রবেশ। তাই অনুপ্রেবেশ ঠেকাতে দ্রুত কমিটি ঘোষণার দাবি নেতাকর্মীদের।

জানা গেছে, গত ১০ জুন বেরোবিতে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। এসে সময় কমিটি পূর্ণাঙ্গ না শোভনের উপস্থিতিতেই নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন বেরোবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়া। পরে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন নেতাকর্মীদের গ্রুপিংয়ে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে দ্রুত কমিটি পূর্ণাঙ্গের আশ্বাস দেন এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরেই সম্মেলনের আয়োজন হবে বলে জানান।

এ ব্যাপারে বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, ছাত্রলীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত একটি সংগঠন। তাই এতে বিভক্তির সুযোগ নেই। আশা করছি, দ্রুতই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।