• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

তবে কী প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৯  

বেশ ক’ দিন ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে দূর্ণীতিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন ও প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি। সর্বশেষ গত বৃহষ্পতিবার জাতীয় সংসদে বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদ মানবিক কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। সে ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চান।

যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলন অথবা জামিনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে। কিš বর্তমান বাস্তবতা হলো এ দুটি উপায়ে মুক্ত করার কোন লক্ষণ বিএনপির দলীয় কর্মকান্ডে অন্তত: এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির অধিকাংশ নেতা প্রকাশ্যে যেমনটি বলছেন যে, তারা বেগম খলেদা জিয়ার প্যারোল চান না । তারা জামিন চান। কিন্তু পর্দার অন্তরালে তারা জামিন বা প্যারোলে মুক্তি প্রত্যাশা করছেন।

একাধিক রাজনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল মুক্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়ার সম্মতি এক্ষেত্রে একমাত্র বাধা হয়ে রয়েছে। তবে এখন বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকসহ অন্যান্যদের চাপ রয়েছে যেন তার প্যারোল হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি পাঁচটি শর্তে আটকে রয়েছে।  ১. তিনি রাজনীতি করবেন না। প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার আগে তাকে মুচলেকা দিতে হবে। যেখানে আপাতত সব ধরনের রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেবেন। ২. প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে চলে যাবেন। ৩. দেশের বাইরে গিয়ে তিনি চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোন রাজনীতি বা সভা সমাবেশ বা অন্য কোন রাজনৈতিক কর্মকাÐে অংশগ্রহণ করবেন না। রাজনৈতিক কোন বক্তব্য বিবৃতি তিনি দেবেন না। ৪. নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা শেষ করে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। তার ব্যাপারে আইনগত যে প্রক্রিয়া তা অব্যাহত থাকবে। ৫. চিকিৎসা বিষয়ে নিয়মিত আপডেট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগ আগে থেকেই বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে, বেগম খালেদা জিয়া যদি প্যারোলের আবেদন করেন তাহলে তা বিবেচনা করা হবে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু বিএনপির মধ্যে একটি বড় অংশ প্যারোল বিরোধী ছিল। তাদের পক্ষে বক্তব্য ছিল যে, প্যারোলে মুক্তি পেলে বেগম খালেদা জিয়ার যে ইমেজ তা নষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি প্যারোলের মাধ্যমে মুক্তি পেলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিএনপির মধ্যে অনেকে বলছেন, তারেক জিয়াও প্যারোলে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে স্বাভাবিক জীবন যাাপন করছেন। কাজেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়াটাই হলো কথা। হঠাৎ করেই গত দুই সপ্তাহ ধরে তারেক জিয়া খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সোচ্চার হয়েছে। এজন্য তিনি প্যারোলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলেও জানা গেছে। যদিও প্রথম দিকে প্যারোলের ব্যাপারে বিএনপির অনেক নেতাই নেতিবাচক ছিলেন। কিন্তু তারা কেউ তারেক জিয়ার সামনে কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পান না। কাজেই তারেক জিয়ার প্রভাব বলয়ে থাকা বিএনপি হয়তো শেষ পর্যন্ত শর্তগুলো মেনে নিয়েই প্যারোলে রাজি হবেন।

এখানে একটি বিষয় প্রনিধানযোগ্য, তা হলো খালেদা জিয়া প্যারোলের ব্যাপারে এখনো নেতিবাচক রয়েছেন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে তার সঙ্গে তার পরিবারের লোকজন দেখা করলেও তিনি প্যারোলের ব্যাপারে অনাস্থা জানিয়েছেন। কিন্তু যদি শেষ পর্যন্ত দলের মধ্যে এই চিন্তাটা প্রবল হয় যে, বেগম জিয়ার মুক্তিই বড় কথা তাহলে শেষপর্যন্ত হয়তো তারা প্যারোলের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করলে সরকার সেটা বিবেচ’না করবেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ