বিটকয়েন ও লেনদেন
দৈনিক গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০১৯
বিটকয়েন’ নামক ডিজিটাল মুদ্রার আলোচনা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। এর মূল কারণ এ মুদ্রার রেকর্ড পরিমাণে মূল্যবৃদ্ধি। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সতর্ক করলেও মানুষ ব্যাপক হারে এর প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। কখনো কখনো হ্যাকাররা কম্পিউটার হ্যাক করে অর্থ দাবি করছে এবং ‘বিটকয়েন’-এর মাধ্যমে দাবি করা অর্থ পরিশোধের জন্য বলছে। তা ছাড়া অবৈধ ও অনৈতিক কার্যকলাপে, কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণহীন এ মুদ্রার সীমাহীন ব্যবহার যেকোনো সময় বিশ্বব্যাপী বয়ে আনতে পারে অর্থনৈতিক মহামন্দা। সুতরাং অবিলম্বে এর রাশ টেনে ধরা উচিত। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার পাশাপাশি শরিয়াহর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার।
Bitcoin শব্দের অর্থ হচ্ছে ক্ষুদ্র মুদ্রা, সাঙ্কেতিক মুদ্রা, ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। কম্পিউটারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তথ্যের সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হয় বিধায় একে ‘বিটকয়েন’ নামে অভিহিত করা হয়। বিটকয়েনকে ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) অর্থাৎ অদৃশ্য বা গোপন মুদ্রাও বলা হয়। কেননা অন্যান্য প্রচলিত মুদ্রার মতো এর নিজস্ব কোনো মূল্যমান নেই এবং এর সত্তা, আকার বা অস্তিত্বও দৃশ্যমান নয়। বরং এটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাঙ্কেতিক আকারে তৈরি এমন একটি ভার্চুয়াল টোকেন, যা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং এটি বহন বা সংরক্ষণের জন্য কোনো ধরনের আধার, পকেট বা মানিব্যাগের প্রয়োজন হয় না; বরং এগুলো বিভিন্ন ওয়ালেটে সংরক্ষণ করা হয়।
তৈরির প্রক্রিয়া : টাকা ছাপানোর মেশিনে টাকা তৈরি করা হয়। সরকার এর অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় এর মধ্যে ক্রয়ক্ষমতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ‘বিটকয়েন’ তৈরি করার পদ্ধতি একেবারেই ভিন্ন। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটি ইন্টারনেট সিস্টেমে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কে প্রোগ্রামিং করা আছে, যা ইচ্ছা করলে ক্রয় করা যায়। এটি এমন একটি কয়েন, যেটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা দেশ কর্তৃক জারি করা নয়।
আসলে বিটকয়েন তৈরি করার পুরো প্রক্রিয়াটি একটি উন্মুক্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনেই সম্পন্ন হয়। যার সার্ভারে লেনদেনের প্রক্রিয়াটি সুরক্ষিত থাকে তাকে মাইনার বলা হয়। মাইনাররা মাইনিংয়ের মাধ্যমে ‘বিটকয়েন’ তৈরি করেন। একটি লেনদেন সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথে নতুন ‘বিটকয়েন’ উৎপন্ন হয়। বিটকয়েনের লেনদেন গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে করা হয়।
আমাদের দেশে ‘স্বপ্ন’সহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা সুপারশপে ক্রেতারা কোনো পণ্য কিনলে ক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে তাকে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট দেয়া হয়। ধরে নেয়া যাক, পয়েন্টটি একটি ভার্চুয়াল টোকেন। নির্ধারিত পরিমাণে পৌঁছার পর ওই পয়েন্টের বিপরীতে ক্রেতা কোনো পণ্য ক্রয় করতে পারেন। অর্থাৎ প্রকারান্তরে এ পয়েন্টটিকেই এক ধরনের মুদ্রা বা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। বিটকয়েন কনসেপ্ট অনেকটাই এ ধরনের বা এর কাছাকাছি। একটি পয়েন্ট বা সংখ্যা, যা মাইনিংয়ের পর অর্জিত হয়; মাইনিংয়ে আকর্ষণ তৈরির উদ্দেশ্যে এটিকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। চাহিদা মোতাবেক এর মূল্য বাড়ে বা কমে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সর্বপ্রথম ‘বিটকয়েন’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। ‘নাকামোতো’ নামের এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে মাইনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সর্বপ্রথম ‘বিটকয়েনের’ প্রচলন ঘটান।
মিডিয়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে আসল সাতোশি নাকামোতো হিসেবে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম একজন জাপানি-আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানীকে নাকামোতো হিসেবে গণ্য করা হয়। পরে ‘হাল ফিন্নি’ নামক অপর একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানীর ব্যাপারে ধারণা করা হয়, তিনিই সর্বপ্রথম বিটকয়েন দিয়ে লেনদেন করেন। আবার অস্ট্রেলিয়ান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ‘ক্রেইগ রাইট’ নিজেকে ‘আসল’ সাতোশি নাকামোতো বলে দাবি করেছেন। বিবিসি, দ্য ইকোনমিস্ট, জি কিউ-এর সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘ইলন মাস্ক’ নামক একজন বিলিয়নিয়ারের নাম, যিনি নতুন নতুন প্রযুক্তি ও চিন্তাধারার ব্যাপারে প্রবল আগ্রহী। তবে তিনি ‘বিটকয়েনের আবিষ্কারক’ নন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু hackernoon.com এ ‘সাহিল গুপ্তা’ নামক একজন ব্লগার, যিনি আগে SpaceX-এর ইন্টার্ন ছিলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে এ বিষয়ক একটি ব্লগে অনেক শক্তিশালী যুক্তির ভিত্তিতে ‘ইলন মাস্ক’ই আসল নাকামোতো এবং বিটকয়েনের আবিষ্কারক হওয়ার ‘প্রবল সম্ভাবনা’ বলে দাবি করেন।
আরো কয়েকটি ভার্চুয়াল মুদ্রা : বিটকয়েনের সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে আরো প্রায় এক হাজারেরও বেশি ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল মুদ্রার সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত ও সফল মুদ্রা হচ্ছে ইথেরিয়াম, রিপল, লাইটকয়েন, অল্ট কয়েন, সুইফট কয়েন, বাইট কয়েন, পিয়ার কয়েন, ডোগে কয়েন, গ্রিড কয়েন, ব্লাক কয়েন, জেডক্যাশ, বিটকয়েন ক্যাশ, ওমনি স্টেলার, এক্সআরপি, কারডেনো, পেট্রো ইত্যাদি। এর মধ্যে কয়েকটির বর্ণনা নিম্নরূপ-
ইথেরিয়াম : ২০১৫ সালে চালু হয় ইথেরিয়াম। বিটকয়েনের মতো এর নিজস্ব হিসাব ব্যবস্থা রয়েছে। জনপ্রিয়তা ও বিনিময় মূল্যের দিক থেকে বিটকয়েনের পরেই এর অবস্থান। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ডিজিটাল মুদ্রার বাজারে পুঁজির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালে মুদ্রাটি একবার হ্যাকিংয়ের শিকার হয়। ফলে প্রতিটি ইথেরিয়াম মুদ্রা ১০ সেন্টে বিক্রির ঘটনাও ঘটেছিল। রিপল : রিপল চালু হয় ২০১২ সালে। শুধু কেবল ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, বরং অন্যান্য ধরনের লেনদেনও করা যায় এ ব্যবস্থায়। প্রচলিত ধারার বিভিন্ন ব্যাংকও এ ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেন করছে। বর্তমানে বাজারে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের পুঁজি রয়েছে রিপল ক্রিপ্টোকারেন্সির।
লাইটকয়েন : বিটকয়েনের সাথে দারুণ সাদৃশ্য রয়েছে লাইটকয়েনের। বিটকয়েনের চেয়েও দ্রুত লেনদেন করা যায় বিধায় এ ডিজিটাল মুদ্রাটি ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে এর বাজারমূল্য প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিটকয়েনের সকল ডাটা অসংখ্য মাইনারের লেজারে সংরক্ষণ করা হয়। হ্যাক করতে হলে যেসব কম্পিউটারে তা সংরক্ষণ করা হয়েছে সেগুলো ধ্বংস করতে হবে। তা খুবই কঠিন তবে অসম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার বিভিন্ন ভার্চুয়াল ওয়ালেট হ্যাক হওয়ার ফলে বিটকয়েন মজুদকারী মাইনাররা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে কোনো কোনো ভার্চুয়াল মুদ্রার দর ব্যাপকভাবে নিম্নমুখী হতে দেখা গেছে।
মূল্য ও মনিটরিং : এটি এমন একটি মুদ্রাব্যবস্থা, যা কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারি করা হয়নি। ইন্টারনেট সিস্টেমকে ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এটিকে ডেভেলপ করে এক ধরনের জুয়া খেলার পসরা সাজিয়ে বসেছে। অনেকেই হঠাৎ ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়ার আশায় এর পেছনে অন্ধভাবে ছুটছে, ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। এর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো বৈধ কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে এটা নিয়ে কোনো প্রতারণা বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে সমাধানের কোনো সুযোগ নেই।
বিটকয়েনের চাহিদা ও মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ডলারের বিপরীতে ১টি কয়েনের বিনিময় মূল্য ৪১৯.৭৫ ডলার থাকলেও এ বছরের শুরুতে এর বিনিময় মূল্য ছিল ১৪৩১৭.৮৬ ডলার। প্রায় প্রতিদিনই এর দাম বাড়ছে। গত দেড় বছরে দাম বেড়েছে প্রায় চার গুণ। বাংলাদেশী টাকায় একটি বিটকয়েনের দাম এখন প্রায় ১২ লাখ টাকা। অস্বাভাবিক হারে এই বিনিময় মূল্য বাড়ার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা নেই খোদ ব্যবহারকারীদেরও।
ব্যাপকভাবে এ মুদ্রার বিনিময় মূল্য ‘ফ্লাকচুয়েট’ করার ফলে এবং এর কোনো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা না থাকায় হঠাৎ করে বিটকয়েন মাইনিংয়ের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা বাজার থেকে সরে গেলে বিনিয়োগকারীরা অনিবার্যভাবেই মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কিন্তু এটা আইনগতভাবে বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবিধান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তবে এসব মুদ্রায় ব্যাপক লেনদেনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের অভিলাষে আমেরিকা, কানাডা ও জাপানসহ উন্নত বিশ্বের কোনো কোনো সরকার এ মুদ্রাব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার কথা ভাবছে। এ দিকে, ইরান সরকার প্রথম দিকে এর লেনদেন নিষিদ্ধ করলেও বর্তমানে তা বৈধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
বিটকয়েন ও মাইনিং : ‘মাইন’ শব্দের অর্থ খনি। মাটি বা খনি খুঁড়ে মূল্যবান সম্পদ বের করে আনাকে মাইনিং বলা হয়। যিনি মাইনিং করেন, তাকে মাইনার বলে। বিটকয়েন তৈরির পদ্ধতি অনেকটা খনি থেকে সম্পদ আহরণের মতো হওয়ায়, যারা বিশেষ এলগারিদম সলভ করে বিটকয়েন লাভ করে তাদের মাইনার হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
বিটকয়েনে লেনদেন : বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে এটি গ্রাহকের ডিজিটাল ওয়ালেটে সংরক্ষিত হয়ে যায়। এ সংরক্ষিত বিটকয়েন যদি গ্রাহক কর্তৃক অন্য কারো অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়, তাহলে এই লেনদেনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইলেকট্রনিক সিগনেচার তৈরি হয়ে যায়, যা অন্যান্য মাইনার কর্তৃক নিরীক্ষিত হয় এবং নেটওয়ার্কের মধ্যে গোপন অথচ সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত হয়। একই সাথে গ্রাহকদের বর্তমান লেজারও হালনাগাদ হয়ে যাচ্ছে।
বিটকয়েন দিয়ে কোনো পণ্য কেনা হলে তা বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় এবং বিক্রেতা সেই বিটকয়েন দিয়ে আবার পণ্য ক্রয় করতে পারেন। অপর দিকে, সমানসংখ্যক বিটকয়েন ক্রেতার লেজার থেকে কমিয়ে দেয়া হয়। প্রতি চার বছর পরপর বিটকয়েনের মোট সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ করা হয়, যাতে বাস্তব মুদ্রার সাথে সামঞ্জস্য রাখা যায়। বিটকয়েন লেনদেনে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয় না বিধায় এর লেনদেনের গতিবিধি কোনোভাবেই অনুসরণ করা যায় না। এ জন্যই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিটকয়েনের লেনদেন ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
অবৈধ লেনদেন : প্রেরক ও প্রাপকের তথ্য অজ্ঞাতনামে সংরক্ষিত থাকে বিধায় বিটকয়েনের মাধ্যমে অনায়াসেই মাদক চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনা, অর্থপাচার/কর/শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি-রফতানিসহ বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী ও শরিয়াহ পরিপন্থী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এ কারণেই বৈধ লেনদেন ছাড়াও অবৈধ লেনেদেনের ক্ষেত্রেও বিটকয়েনের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন অস্ট্রেলীয় গবেষকের মতে, বিটকয়েনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় আইনবহির্ভূত কার্যকলাপের হার প্রায় ৫০ শতাংশ।
বিটকয়েন সংগ্রহ : ‘বিটকয়েন’ মাইনিং করে বা ক্রয় করার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। মাইনিং করে যে বা যারা বিটকয়েন সংগ্রহ করে থাকেন, অন্যরা তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থে তা ক্রয় করে নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। তবে এ দু’টি পদ্ধতিই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, উভয় ক্ষেত্রেই ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এসব করতে গিয়ে অনেকেই প্রতারিত হয়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা : বিটকয়েনে লেনদেন না করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে উল্লেখ করা হয় যে- ‘এসব ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত বৈধ মুদ্রা (legal tender) নয় বিধায় এর বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবির (financial claim) স্বীকৃতও থাকে না।
এসব মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয় বিধায় এসব ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭; সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর দ্বারা সমর্থিত হয় না। অনলাইনে নামবিহীন/ছদ্মনামধারী প্রতিসঙ্গীর সাথে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা অনিচ্ছাকৃতভাবে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন ঘটতে পারে। মূলত অনলাইনভিত্তিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রায় অর্থমূল্য পরিশোধ ও নিষ্পত্তি সংঘটিত হয় এবং এটি কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ/পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত না হওয়ায় গ্রাহকেরা ভার্চুয়াল মুদ্রার সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন।
এ অবস্থায়, সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন বা এসব লেনদেনে সহায়তা প্রদান এবং এর প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
এর শরয়ী বিধান : বিটকয়েন বিষয়ে তিন ধরনের মতামত পরিলক্ষিত হয়,
এক : বিটকয়েনের ব্যবহার সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ। এ মতামত প্রদানকারীরা হচ্ছে, মিসরের দারুল ইফতা বা কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ, তুরস্কের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ, দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগ। তা ছাড়া সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আসিম আল-হাকিম নামে একজন মন্ত্রী বিটকয়েন নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে তাদের রাষ্ট্রীয় মতামত তুলে ধরেছেন। এ পক্ষের যুক্তিসমূহ হচ্ছেÑ
(ক) কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা না থাকায় বিটকয়েন ব্যবহারে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে জাতীয় নিরাপত্তা ও কেন্দ্রীয় আর্থিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম ঘটে। (খ) মিসরের গ্র্যান্ড মুফতির ভাষ্য মতে, এ মুদ্রার লেনদেনে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা না থাকায় ইসলামের দৃষ্টিতে এটি চুক্তি ভঙ্গ করার পর্যায়ে পড়ে, যা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ। (গ) এ মুদ্রা মাদক ব্যবসা, চোরাচালানি, নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবসা, সন্ত্রাসী অর্থায়নসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ কার্যক্রমে সরাসরি ব্যবহৃত হয়। (ঘ) বিটকয়েন তৈরি, বিক্রি ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। (ঙ) শরিয়াহর আলোকে বিটকয়েন নিজে কোনো মালে মুতাক্বাওয়্যিম তথা মূল্যমানবিশিষ্ট বস্তু নয় বিধায় এটি মুদ্রা হিসেবে গণ্য হতে পারে না।
এখন পর্যন্ত উপরে উল্লিখিত মতটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী বলে গণ্য করা হচ্ছে।
দুই : মতটি হলো- শর্তসাপেক্ষে বিটকয়েন ব্যবহার জায়েজ ও বৈধ। তবে এ মতটি খুবই দুর্বল ও অনুল্লেখযোগ্য। এ পক্ষের যুক্তিসমূহ হচ্ছে- (ক) ইসলামী ফিকহের মূলনীতিতে বলা হয়েছে- আসলুল মুয়ামালাতি আল ইবাহাতু অর্থাৎ মুয়ামালাত তথা লেনদেনের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে তা মুবাহ বা বৈধ হিসেবে গণ্য হওয়া। (খ) বিটকয়েনের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনা হয় বিধায় বিটকয়েন স্বয়ং নিজে মালে মুতাক্বাওয়্যিম তথা মূল্যমানবিশিষ্ট মুদ্রা হিসেবে গণ্য হবে। (ঘ) বিটকয়েনের ন্যায় অন্যান্য বৈধ মুদ্রার বেলায়ও নিষিদ্ধ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। (ঙ) রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধান কিংবা কেন্দ্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপত্তা বিধান করা। বিটকয়েনের ক্ষেত্রে ব্লক চেইন প্রযুক্তির ব্যবহার উক্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করে। তিন : মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েন ব্যবহার না করার মধ্যেই সর্বাধিক সতর্কতার পরিচয় নিহিত। একটি কনফারেন্সে মালেকি মাযহাবের কয়েকজন ফকিহ এ মতটি তুলে ধরেছেন। তাদের যুক্তি হলো হালাল-হারাম বিবেচনা না করে হঠাৎ করে অতিরিক্ত অর্থ আয়ের লোভে পড়ে, পরে সর্বস্ব হারিয়ে পার্থিব অকল্যাণ ও পরকালীন ভয়াবহতার মুখে নিজেকে ঠেলে দেয়া কখনো বুদ্ধি ও বিবেকসম্মত হতে পারে না।
বিভিন্ন কারণে বিটকয়েন এক দিকে যেমন শরিয়াহ সম্মত নয়, তেমনিভাবে সরকারিভাবেও স্বীকৃত নয়। সুতরাং বিটকয়েন তৈরি, ক্রয় বা এর মাধ্যমে লেনদেনের সাথে জড়িত না হওয়াই অধিক সতর্কতা ও শরিয়াহ সম্মত বলে আমরা মনে করি। দেশের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় আইনের আনুগত্য করা আমাদের ওপর ওয়াজিবও বটে। এতে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের পাশাপাশি আমাদের ইহকালীন সফলতাও নিহিত বলে বিশ্বাস করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের যথাযথভাবে শরিয়াহ পরিপালনের মাধ্যমে উভয় জাহানে কল্যাণ অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন!
লেখক : সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা, সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ
- গোপালগঞ্জে সেপটিক ট্যাংকে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
- গোপালগঞ্জে বৈদেশিক মুদ্রা প্রতারক চক্রের ২ সদস্য গ্রেপ্তার
- উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
- শেখ হাসিনার আঁচলে মায়ের গন্ধ!
- জাতির পিতার সমাধিতে জাফর ওয়াজেদের শ্রদ্ধা
- দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের পদচিহ্নও থাকবে না: রাষ্ট্রপতি
- কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন: রাষ্ট্রপতি
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ, এটি মিথ্যা প্রচার
- পিরামিডের রহস্য ভেদ করলো বিজ্ঞানীরা!
- জিয়াউর রহমান বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন- ওবায়দুল কাদের
- ইন্টারনেটের গতিতে দুই ধাপ এগোলো বাংলাদেশ
- অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে যুক্তরাজ্যের চুক্তি
- চীনের ২৬ কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দেশে কাজ করছে ৪৫ সংস্থা:দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
- ঝড়ে লণ্ডভণ্ড স্টেডিয়াম, ‘অনিশ্চিত’ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ
- সৌদিতে বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
- গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হামাস
- ভারতে তীর্থ থেকে ফেরার পথে বাসে আগুন, নিহত ৮
- জনগণকে আরো বেশি সেবা দিতে চায় পুলিশ: আইজিপি
- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল
- নড়াইলে ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যায় ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪
- দুবাইয়ে ৫৩২ বাংলাদেশির সম্পত্তি, কী বলছে দুদক
- বিএনপির সময় ঋণ খেলাপির তালিকা সবচেয়ে বড় ছিল: আইনমন্ত্রী
- নির্বাচনী ‘অস্বস্তি’ কাটিয়ে সামনে এগোনোর বার্তা ডোনাল্ড লু’র
- শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
- খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি তৈরি করে জিয়া: প্রধানমন্ত্রী
- নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নিহতের জেরে গোপালগঞ্জ উত্তাল
- জাতীয় শিশু দিবসের পুরস্কার বিতরন
- গোপালগঞ্জের হোটেল রোস্তরার খাবারের নমূনা সংগ্রহ শুরু
- বিশ্বকাপের আগে ভারতের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ
- টুংগীপাড়ার বাবুল শেখের অপকর্মের তথ্য ফাঁস
- সেই নারী কাউন্সিলর চামেলীকে দল থেকে বহিষ্কার
- কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা
- সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়
সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস কাতারের আমিরের - গণতন্ত্রে না ফিরলে বিলুপ্ত হবে বিএনপি: কাদের
- সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর নামে দুদকের পৃথক দুই মামলা
- চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডাবের দাম
- গোপালগঞ্জে ভাসুরের বিরুদ্ধে গৃহবধূর উপর এসিড নিক্ষেপের অভিযোগ
- টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে চীনা রাষ্ট্রদূতের শ্রদ্ধা
- ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
- ঢাকার তাপমাত্রা দেখে সারা দেশের বিদ্যালয় বন্ধ করা যাবে না
- বগুড়ায় সিনেমা হলে টিকিটের সঙ্গে বিরিয়ানি ফ্রি
- আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি
- বৃহস্পতিবার সারাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে
- গোপালগঞ্জের স্বামী হত্যায় স্ত্রী ও প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু
- পদ্মশ্রী পদক গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
- কোটালীপাড়ায় এক যুবককে গলা কেটে হত্যা
- ফিলিস্তিনের পক্ষে লেখায় ‘লাইক’ দেওয়ায় স্কুলশিক্ষককে চাকরিচ্যুত
- ঢাকায় কাতারের আমির
অগ্রাধিকার পাচ্ছে বাণিজ্য বিনিয়োগ ও ভূরাজনীতি