• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জন

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০১৯  

বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচক বা ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে’ এবার বেশ ভালো করবে বাংলাদেশ। এমন ইঙ্গিত মিলেছে সম্প্রতি। সহজে ব্যবসা সূচক প্রকাশের আগে এবার সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে-এমন ২০টি দেশের তালিকা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তালিকায় বাংলাদেশও আছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের এ সূচকটিতে উন্নতির জন্য কয়েক বছর ধরে কাজ করছে সরকার। কিন্তু উন্নতি তেমন একটা হচ্ছিল না। বরং গত বছরের প্রতিবেদনে আফগানিস্তান বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে সামনে চলে যায়। ভারতও এ ক্ষেত্রে লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছে। অবশেষে এবার উন্নতির আশা দেখছে বাংলাদেশ। সহজে ব্যবসা সূচকের মাধ্যমে কোনো দেশে ব্যবসা করা কতটা সহজ, তা প্রকাশ পায়। মনে করা হয়, বিদেশি বিনিয়োগ করার আগে দেশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের এ সূচকটি বিবেচনায় আসে। বাংলাদেশ এখন এ সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। এবার বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই অবস্থানের উন্নতি হতে পারে। এখন সূচকে মালয়েশিয়া ১৫, চীন ৪৬, ভিয়েতনাম ৬৯, শ্রীলঙ্কা ১০০ ও পাকিস্তান ১৩৬তম। আফগানিস্তানের অবস্থান ১৬৭তম। মোটাদাগে মোট ১০টি ভিত্তির ওপর বিশ্বব্যাংক ডুয়িং বিজনেসের র‌্যাঙ্কিং বা ক্রমতালিকা তৈরি করে। এগুলো হলো ব্যবসা শুরুর অনুমোদন, ভবন নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুৎ-সংযোগ, ভূমি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর প্রদান, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়া। এসব প্রক্রিয়ায় জটিলতা, ব্যয় বেশি হওয়া ও দীর্ঘসূত্রতা একটি দেশের পিছিয়ে থাকার কারণ।
দেশের অর্থনীতি এখন অন্য সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের নিরাপদ ঠিকানা। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর আগামী নির্মাণ করতে চায় বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বেশি। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আট বছরে বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ নিবন্ধন চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ সময়ে প্রকল্পের সংখ্যা ২৩ শতাংশ ও বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে কর্মসংস্থানের প্রস্তাব কমেছে ১৭ শতাংশ।
আসলে গত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। শক্তিশালী নেতৃত্ব, সুশাসন, সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, স্থিতিশীল সরকার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত করে তুলেছে। বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল বানিয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। বাংলাদেশ বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণকারী দেশ থেকে এখন বিনিয়োগের অনুকূল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে এখন জিডিপির ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ আগের দশকের তুলনায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭০.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ত্রিশতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আউটলুক ২০১৯ উল্লেখ করেছে যে বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া সহজ করেছে। বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া ও ঋণপ্রাপ্তির দিক দিয়ে উন্নতি করেছে। নতুন কোম্পানি নিবন্ধনে বাংলাদেশ খরচ কমিয়েছে। ডিজিটাল সনদে ফি বা মাশুল আর নিচ্ছে না। ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) ঋণ তথ্যের আওতা বাড়িয়েছে। যেখানে এখন পাঁচ বছরের তথ্য পাওয়া যায়, সেটা ঋণের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি উন্নতিতে সেরা ২০টি দেশের তালিকায় রয়েছে চীন, ভারত, পাকিস্তান, আজারবাইজান, বাহরাইন, জিবুতি, জর্ডান, কেনিয়া, কসোভো, কুয়েত, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, কাতার, সৌদি আরব, তাজিকিস্তান, টোগো, উজবেকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে। এ তালিকায় কোন দেশ বেশি উন্নতি করেছে, তা প্রকাশ করেনি বিশ্বব্যাংক। ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রতিবেদনে ক্রমতালিকা করা হয়েছে দেশের নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, বাংলাদেশ এ সূচকে উন্নতির জন্য যে সংস্কার কর্মসূচি নিয়েছিল, তার সুফল এটি। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ এবারের সূচকে বেশ উন্নতি করবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ