• বুধবার ১৫ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

  • || ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বাংলাদেশের ২০১ গম্বুজ মসজিদ হতে যাচ্ছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০১৯  

সারাবিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের ২০১ গম্বুজ মসজিদ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ মসজিদটি রাজধানী ঢাকা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইলের ঝিনাই নদীর তীরে নির্মাণ করা হয়েছে। খবর আরব নিউজ।

৪৫১ ফুট উচ্চতার কংক্রিট নির্মিত মিনারগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনারের খেতাব দিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড। ৪৫১ ফুট উচ্চতা সাধারণত ৫৫ তলা বিল্ডিং সমান উচ্চতা। বাংলাদেশে এত উচ্চতার কোনো বিল্ডিং এখনও নির্মিত হয়নি।

 

এক সঙ্গে ১৫ হাজার লোকের নামাজের ব্যবস্থা করা হলেও লোক সমাগমের কারণে কর্তৃপক্ষ তা ৩০ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।

২০১টি গম্বুজের মধ্যে উচ্চতায় সবচেয়ে বড় গম্বুজ হলো ৭৯ ফুট। আর অন্যগুলোর উচ্চতা ৪২ ফুট।

southeast

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে এ মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পাঁচ বছরে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। আয়োজকরা এ মসজিদ নির্মাণে ব্যয় করেছেন ১৩০ কোটি টাকা।

টাঙ্গাইলের গোপালপুরের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম তার জন্মস্থানে যখন এ মসজিদ কমপ্লেক্স প্রকল্প নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন। তখন তিনি গঠন করেন রফিকুল ইসলাম ট্রাস্ট।

রফিকুল ইসলাম তার স্বপ্নপূরণে তার কিছু পৈতৃক সম্পত্তি এ ট্রাস্টে দান করেন। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে গ্রামবাসীরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। অবশেষে ২০১৩ সালে ৫ একর জমির ওপর মসজিদ কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এর আয়তন দাঁড়ায় ১৫ একর-এ।

southeast

রফিকুল ইসলামের ভাষায়, ‘আমার গ্রাম দক্ষিণ পাথালিয়া দেশের মানুষের কাছে ছিল এক অপরিচিত গ্রাম। কিন্তু এখন দেশ-বিদেশের অনেক মানুষ ২০১ গম্বুজ মসজিদ কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের দক্ষিণ পাথালিয়াকে এক নামে চেনে। প্রত্যেক ছুটির দিন এ মসজিদ কমপ্লেক্স পরিদর্শনে আসে প্রায় ১০ হাজার মানুষ।’

এটি ছিল আমার জন্য এক ‘স্বপ্ন প্রকল্প’। যা আমি ২০ লাখ টাকায় শুরু করেছি। পরে দেশের অনেক ব্যক্তি ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। অর্থাভাবে এক মুহূর্তের জন্যও এ মসজিদ কমপ্লেক্সের কাজ বন্ধ হয়নি বলেও উল্লেখ করেন রফিকুল ইসলাম।

একটি ভিন্ন মসজিদ নির্মাণের আগ্রহে রফিকুল ইসলাম মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশের বিখ্যাত মসজিদগুলো পরিদর্শন করেন। সেগুলো দেখে তিনি এ মসজিদ নির্মাণের ধারণা নেন।

পরবর্তীতে তিনি মসজিদের নকশা গঠনে একজন বাংলাদেশি স্থপতির সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

southeast

এ মসজিদের অনন্য বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা হলো-
২০১ গম্বুজ মসজিদ কমপ্লেক্স পরিদর্শনে বিদেশি দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করেন হেলিপ্যাড। যাতে বিদেশি মেহমানরা মসজিদ পরিদর্শনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারেন।

২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে-
- একটি ইয়াতিমখানা।
- মৃতব্যক্তির জানাজার জন্য থাকবে মেহরাব সংলগ্ন হিমাগার। 
- বয়স্ক মানুষের জন্য থাকার জায়গা। এবং
- নারীদের জন্য রয়েছে একটি দাতব্য হাসপাতাল।
- দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য পুর্নবাসন ব্যবস্থা।

উল্লেখ্য যে, এ মসজিদের অনেক নির্মাণ সামগ্রী ও ফিটিংস বিদেশি। মসজিদের টাইলস এবং পার্বেল পাথর ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড এবং চায়না থেকে আমদানি করা হয়েছে।

এ মসজিদের প্রধান আকর্ষণ হলো ২০১টি গম্বুজ এবং ৪৫১ ফুট উচ্চতার মিনার। উপমহাদেশের ঐতিহ্য অনুসারে মিনারের সাজ-সজ্জা ও অলংকরণ করা হয়েছে বলে জানান মসজিদে প্রধান স্থপতি মৃন্ময় অধিকারী।

southeast

মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণে উভয় দিক খোলা রাখা হয়েছে। হালকা এবং প্রাকৃতিক বায়ু প্রবাহে গড়ে তোলা হয়েছে বনায়ন। মসজিদে আগত মুসল্লিরা যাতে কৃত্রিম শীতাতপনিয়ন্ত্রি ব্যবস্থায় নামাজ পড়তে পারে সে চিন্তা থেকেই এ পরিকল্পিত বনায়ন গড়ে তোলা হয়েছে।

মসজিদের ভেতরে দেয়ালের সঙ্গে পিতলের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে সেখানে বসে বসে মুসল্লিরা পবিত্র কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত করতে পারে।

এছাড়াও মসজিদের পশ্চিমের দেয়ালে টাইলসে অংকিত রয়েছে পুরো কুরআনুল কারিম। মসজিদে আগত মুসল্লিরা বসে ও দাঁড়িয়ে তেলাওয়াত করতে পারবে এ কুরআন।

মসজিদে প্রধান গেট নির্মাণে ব্যবহৃত হবে প্রায় ২টন পিতল। প্রাকৃতিক শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বনায়ন ব্যবস্থা থাকলেও পুরো মসজিদটি থাকবে আধুনিক এয়ার কন্ডিশন ব্যবস্থা। পাশাপাশি যুক্ত করা হয়েছে হাজারেরও বেশি বৈদ্যুতিক পাখা।

মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় আয়োজকরা মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন। তবে মসজিদ নির্মাণ কাজ ও অলংকরণ শেষ হলেও সুউচ্চ মিনারের নির্মাণ কাজ ও অলংকরণের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি।

southeast

ইতিমধ্যে লোক সমাগম বেশি হওয়ায় আয়োজকরা মসজিদটিকে দ্বিগুণ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর জন্য প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা।

তাই ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা রফিকুল ইসলাম জানান, ‘মিনারসহ প্রাসঙ্গিক অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে যদি কোনো বিদেশি সংস্থা বা মুসলিম দেশ এগিয়ে আসে তবে তা হবে ট্রাস্টের জন্য অনেক বড় সহায়ক।

ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মসজিদে নববির গ্র্যান্ড ইমাম এ মসজিদ কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন।

মসজিদের উদ্বোধনী দিনের আনুষ্ঠানিক নামাজের নেতৃত্ব দেবেন মদিনা শরিফ থেকে আগত মসজিদে নববির প্রধান ইমাম।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ