• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মুসলিম নারীকে আশ্রয় দিয়ে রোষানলে পুরোহিত!

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৯  

ভারতের মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের রোষানলে পড়েছেন স্বগোত্রীয় এক পুরোহিত। অপরাধ হলো অসহায় এক মুসলিম নারীকে আশ্রয় দেয়া। পুরোহিত সুভাষ বাবুর স্ত্রীর প্রশ্ন, ধর্ম কি মানবতার চেয়েও বড়? সুভাষ বাবুল বলেন, ‘অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আসল ধর্ম। এ কাজ থেকে কখনও সরতে পারবো না।’

আনন্দ বাজার পত্রিকার বরাতে জানা যায়, সাত মাস আগে স্বামীর বাড়ি থেকে দুই নাবালক শিশুসহ বিতারিত হন এক মুসলিম নারী। তার নাম সখিনা। সুভাষ রায় চৌধুরীর মেয়ে কাকলি ওই নারীকে রাস্তায় বসে থাকতে দেখে তার বাবার সঙ্গে আলাপ করে তাকে বাড়িতে আশ্রয় দেন। এখানেই বাধে বিপত্তি।

 

সুভাষ রায় চৌধুরী পেশায় একজন পুরোহিত। মানুষের বাড়ি বাড়ি পূজা করেই চলতো তার পরিবার। মুসলিম নারী সখিনাকে বাড়িতে আশ্রয় দেয়ায় গ্রামের লোকেরা বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেনি।

তারপর পুরোহিত সুভাষ রায় চৌধুরী যেখানেই পূজা করতে যান, সেখান থেকেই তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তাকে বলা হয়, আপনাকে আর পূজা করতে আসতে হবে না।

এ খবর প্রকাশিত হওয়ায় তার সাহায্যে এগিয়ে আসে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন থেকে খবর পাঠিয়ে তাকে দফতরে ডেকে নেয়া হয়। তার অসুবিধার কথা শোনেন। সেখানে ঘটনার বিবরণে জানা যায়-

সখিনা নামে এক নারী দুই নাবালক শিশুসহ স্বামীর বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বিতারিত হয়। রাস্তায় বসে থাকতে দেখে পুরোহিত সুভাষ রায়ের মেয়ে কাকলি তার অনুমতি নিয়ে দুই শিশুসহ সখিনাকে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়। আর এতে পুরোহিতের পুরো পরিবারকে এক ঘরে করে রাখে স্থানীয় গ্রামবাসী।

সুভাষ রায় চৌধুরী বলেন, ‘ঘরহারা একটা নারী দুই শিশু সন্তানসহ রাস্তায় ঘুরছে, তা শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। তাই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও নাবালক দুই শিশুসহ সখিনাকে ঘরে আশ্রয় দেই। আমার কাছে এটাই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’

পুরোহিত সুভাস রায় চৌধুরীর সঙ্গে তার মেয়ে কাকলি এবং স্ত্রী ইলাও একমত। তাদের ভাষায়, ‘আমরা তো এর মধ্যে কোনো অন্যায় দেখি না। পুরোহিতের স্ত্রী ইলার প্রশ্ন, ধর্ম কি মানবতার চেয়েও বড়?

এসব বিবরণ শোনার পর জেলা প্রশাসনের হরিহার ব্লকের পূর্ণে্ন্দু স্যানেল। তিনি তাদেরকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন।

 

স্থানীয় পঞ্চায়েত উন্নয়ন অধিকারক ইয়াদুল শেখ জানান, ‘পুরোহিতের পরিবারের হাতে এ দিন ২৪ কেজি চাল, বাসন, কাপড় ও বিছানার চাদর তুলে দেয়া হয়েছে। নিয়মিতই এ সাহায্য অব্যাহত থাকবে বলেও জানান পূর্ণেন্দু বাবু।

পুরোহিতের একঘরে হওয়ার খবরে বহরমপুর প্রশাসনের ইউটিসিটি (সরকারি বিএড কলেজ) কলেজের পক্ষ থেকে সুভাষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কলেজের এক অধ্যাপক এ পরিবারের হাতে নগদ ৫ হাজার টাকা তুলে দেন।

এ সাহায্য পেয়ে সুভাষ রায় চৌধুরী, মেয়ে কাকলি, স্ত্রী ইলাসহ আশ্রয় লাভ করা নারী সখিনা খুবই খুশি।

সুভাষ রায় চৌধুরী স্থানীয় লোকদের দ্বারা একঘরে হলেও মুসলিম নারী সখিনা ও তার দুই সন্তান পুরোহিতের পরিবারের অংশ হয়ে ওঠেছে। সুভাষ রায় চৌধুরী দুই ছেলে-মেয়েকে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।

 

মুসলিম নারী সখিনা পুরোহিতের মেয়ে কাকলী আর স্ত্রী ইলার সঙ্গে থেকেই মিলেমিশে ঘরের কাজ-কর্ম করে যাচ্ছেন।

মুসলিম নারী সখিনা জানান, ‘পুরোহিতের বাড়িতে থাকলেও নিজের ধর্ম (নামাজ-রোজা) নিয়ে কখনই কোনো বাধা পাননি। আমার ধর্ম পালন নিয়েও আপত্তি তোলেননি সুভাষ বাবু। রোজাও রাখতে পারছি।’

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ