• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

আশরাফুল মাখলুকাত কী ?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯  

আশরাফুল মাখলুকাত বলতে আপনি বুঝেন?  আপনি কি আল্লাহ্‌র একটি সুন্দরতম সৃষ্টি নন? "আশরাফুল মাখলুকাত" শব্দটির অর্থ- "সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি" বা সৃষ্টির সেরা। আল্লাহ্‌ হচ্ছেন স্রষ্টা। তার অনেক সৃষ্টি রয়েছে। তাঁর সব সৃষ্টিই সুন্দর। কিন্তু আল্লাহ্‌র এত সৃষ্টি মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কোনটি? তাঁর সবচেয়ে সেরা সৃষ্টিটি কি? মহান আল্লাহ্‌ বলেন- “"আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দর থেকে সুন্দরতর আকৃতিতে”। (সুরা আত ত্বীনঃ ৪) 

তাহলে বুঝা যাচ্ছে স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছে ইনসান বা মানুষ। অর্থাৎ মানুষই হচ্ছে- আশরাফুল মাখলুকাত। কিন্তু সকল মানুষই কি সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি? এর উত্তর বলতে গেলে আপনি হয়তো মন খারাপ করে ফেলবেন। কেননা আল্লাহ্‌ আপনাকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন বলে আপনি অনেক আনন্দিত কিন্তু আপনি কি আশরাফুল মাখলুকাত কি না তা ভেবে দেখা উচিৎ। আপনি কি জান্নাতের উপযুক্ত নাকি জাহান্নামের উপযুক্ত তা অবশ্যই ভেবে দেখুন।
মহান আল্লাহ্ বলেছেনঃ
"আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে। অতঃপর তাকে নামিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে নীচে। (সুরা আত ত্বীনঃ ৪-৫)
কিন্তু তারা নয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে অশেষ পুরস্কার। (সুরা আত ত্বীনঃ ৬)
এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে তারাই আশরাফুল মাখলুকাত যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে,
আর বাকিরা যদিও সুন্দর গঠনে সৃষ্ট হয়েছে কিন্তু বিশ্বাস স্থাপন ও সৎকর্ম না করার কারনে তারা নিকৃষ্ট। আল্লাহ্‌ বলেছেন তাদেরকে একেবারে নিকৃষ্ট স্থানে নামিয়ে দেয়া হবে।
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন যারা আশরাফুল মাখলুকাত তারাই জান্নাতের মত পবিত্র স্থানে স্থান পাবে। বাকীদের গঠন-আকৃতি সুন্দর হওয়া স্বত্বেও তাদের স্থান জান্নাতের মত পবিত্র স্থানে হবে না। কারন এটাই স্বাভাবিক যে- নিকৃষ্ট বস্তু উৎকৃষ্ট স্থানে রাখলে সেটা মানায় না।

অতএব, "আশরাফুল মাখলুকাত" হতে গেলে অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং অবশ্যই অবশ্যই সৎকর্ম করতে হবে। বর্তমান যুগের কিছু ফাসেক মুসলিম রয়েছে যারা মুখে তো বলে যে, আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি কিন্তু সৎকর্মের ধার ধারে না। খারাপ কাজ করতেই থাকে তো করতেই থাকে। এরা আশরাফুল মাখলুকাত নয়।

যেমনটা আল্লাহ্‌ সুরা আত ত্বীনে বলেছেন, এই জাতের ফাসেক মুসলিমদেরকে আল্লাহ্‌ শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি তো করেছেন কিন্তু এদের সৎ কাজের পরিবর্তে খারাপ কাজ করতে থাকার কারনে আল্লাহ্‌ এদের বিচারের দিন জাহান্নামের নিকৃষ্ট স্থানে নামিয়ে দিবেন।

আপনার আমার চেয়ে কত যে সুন্দর-সুন্দরী, স্মার্ট, সুদর্শন, কাফের-মুশরিক- বে-দ্বীন মুসলিম যে এই পৃথিবীতে আছে কিন্তু যদিও তারা মানুষ তথাপি তারা আশরাফুল মাখলুকাত নয়। কত সুন্দরী সুন্দরী হলিউড-বলিউডের নায়িকারা, অন্যান্য নারী যে রয়েছে এই পৃথিবীতে তারা নিজেদের দেহ প্রদর্শন করেই চলছে, আল্লাহ্‌ তাদেরকে সৌন্দর্য্য দিয়েছেন, তাদেরকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তারা আল্লাহ্‌র আদেশ নিষেধের বিরুদ্ধাচরণ করেই যাচ্ছে। সৎকর্মের কোন তোয়াক্কাই করছে না। অসৎকর্ম থেকে বিরতও হচ্ছে না। অপরদিকে কত স্মার্ট, সুদর্শন নায়ক, উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিত্ব যে রয়েছে এই পৃথিবীতে তারাও আল্লাহ্‌র সুন্দরতম সৃষ্টি হওয়া স্বত্বেও আশরাফুল মাখলুকাত নয়।

যারা কাফির, মুশরিক তাদের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম তারা স্মার্ট, সুদর্শন হওয়া স্বত্বেও একেবারে নিকৃষ্ট। কিন্তু যারা আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান এনেছে, নিজেকে মুসলিম বলে মুখে দাবী করে এরপরেও যারা আল্লাহ্‌র হুকুম আহকাম মেনে চলে না বরং তাদের মন যা চায় তা-ই করে প্রকৃতপক্ষে তারাও আশরাফুল মাখলুকাত নয়। আসলে তারা মনের খায়েশের গোলাম, প্রবৃত্তির পূজারী।
এরা আল্লাহ্‌র সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হওয়া স্বত্বেও এরা যে কতটা নিকৃষ্ট সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ
"আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা মনের কু-প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি দায়িত্ব নিবেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে ? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। (সুরা আল ফুরকানঃ ৪৩-৪৪)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ্‌ তাদেরকে চতুস্পদ জন্তুর সাথে তুলনা করলেন। অর্থাৎ তারা কুকুর-শিয়ালের মত। পরক্ষনে আল্লাহ্‌ বললেন তারা চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। অর্থাৎ কুকুর-শিয়ালও ঐ সমস্ত মানুষের চেয়ে উত্তম। ঐ সমস্ত মানুষ গুলো চেহারায় সুন্দর হলে কি হবে, বডি ফিটনেসের দিক দিয়ে সুন্দর হবে কি হবে আসলে তারা কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট।

একটু ভেবে দেখুন, একজন মানুষের জন্য এর চেয়ে লজ্জাকর আর কি হতে পারে? এরপরেও কি আমরা একটু চিন্তাশীল হব না?

তাদেরকে মহান আল্লাহ্‌ যদিও অতি সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন তথাপি তারা আশরাফুল মাখলুকাত নয়।
তারা নিকৃষ্ট স্থানের বস্তু। আর নিশ্চয়ই জাহান্নাম অতি খারাপ স্থান, অতি নিকৃষ্ট স্থান। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ এদের সেই নিকৃষ্ট স্থানে নামিয়ে দেবেন। যেমনটা আল্লাহ্‌ বলেছেন। আর আল্লাহ্‌র কথার কখনো নড়চড় হয় না।
তারপরেও কি কারো মনে কোন সন্দেহ আছে?
মহান আল্লাহ্‌ বলেন- “অতঃপর কেন তুমি কেয়ামতের প্রতফলকে অবিশ্বাস করছ? আল্লাহ কি বিচারকগণের মধ্যে শ্রেষ্টতম বিচারক নন? (সুরা আত ত্বীনঃ ৭-৮)


অতএব একথা একেবারে সুস্পষ্ট যে সকল মানুষ-ই আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা নয়।
আরো স্পষ্টভাবে দেখুন সূরা বাইয়্যেনাঃ ৭ নং আয়াত-
মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ
"যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা।" (সূরা বাইয়্যেনাঃ ৭)
এবার নিজেকে প্রশ্ন করি- আমি কি আশরাফুল মাখলুকাত???

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ