• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

একই গাছে দু’ধরনের ফল

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৯ মে ২০১৯  

পাহাড়ে বাগানে বাগানে শোভা পাচ্ছে একি গাছে দু’ধরনের ফল। একটির নাম কাজু আপেল, অন্যটির নাম কাজু বাদাম। নামের মতন দুটি ফলের স্বাদও ভিন্ন। খেতে সুস্বাদু দু’ধরনের ফলই খাওয়া যায়। গাছে প্রথমে নরম তুলতুলে কাজু আপেল জন্মে। এই আপেলের মাথায় জন্মানো বাঁকা ফলই হচ্ছে কাজু বাদাম। বাদামের ওপরে মোটা সহজ রঙের খোসা থাকে। বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে খোসা ছাড়িয়ে সংগ্রহ করতে হয় কাজু বাদাম। কাজু বাদাম খুবই স্বাস্থ্যকর একটি ফল। গাছের চারা লাগানোর পর গাছের বয়স চার থেকে পাঁচ বছরের মাথায় প্রথমে ফুল এবং পরবর্তীতে ফল আসে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস হচ্ছে ফুল ফোটার সময়। আর এপ্রিল থেকে জুন মাস হচ্ছে কাজু বাদাম সংগ্রহের সময়। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সম্ভাবনাময় কাজু বাদামের চাষ হচ্ছে। চাহিদা থাকায় সম্ভাবনায় লাভজনক এ চাষে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়িরা। কাজু বাদামের চাষ করে পাহাড়িদের অনেকে এখন স্বাবলম্বী। তবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াই চাষ করায় কাঙ্ক্ষিত আয় হচ্ছেনা দাবি চাষীদের।
কৃষি বিভাগ ও চাষীদের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য কাজু বাদামের চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া, মুনলাই, বটতলিপাড়া, পলিথং পাড়া, থানচি উপজেলার রেমাক্রি, তিন্দু, বলিপাড়া, রোয়াংছছড়ি উপজেলার রনিংপাড়া, হ্লাপ্পাইমুখ, পাইনখিয়াং পাড়া, কচ্ছপতলী, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, সোনাইছড়ি এবং সদর উপজেলা গেজমনিপাড়া, স্যারণপাড়া, ফারুকপাড়ায় সবচেয়ে বেশি। জেলায় মোট ৮শত ১৫ হেক্টর জমিতে কাজু বাদামের চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর হেক্টরে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই মেট্টিকটন কাজু বাদাম উৎপাদন হয়। এবছর গতবারের তুলনায় কাজু বাদামের উৎপাদন আরো বাড়বে। এবার প্রায় ১৮শ মেট্টিকটনের মত কাজু বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে খোসা’সহ প্রতি মণ কাজু বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার দুইশ টাকা পর্যন্ত। যা ২০১৭ সালে বিক্রি হয়েছিল ৩২শ থেকে ৪ হাজার টাকায় এবং গতবছর ২০১৮ সালে বিক্রি হয়েছিল ৩৫শ টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য কাজু বাদামের চাষ হচ্ছে। কিন্তু রাঙামাটিতে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করণের ব্যবস্থা থাকলেও বান্দরবান জেলায় নেই। এ বিষয়টিকে কৃষি বিভাগের উদাসীনতা হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় কাজু বাদাম চাষীদের অনেকে। চাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা এবং বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কারখানা না থাকায় সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্যটি শতভাগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না, অভিযোগ স্থানীয় চাষীদের। কাঁচা বাদাম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখলেও প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকলে আরো দ্বিগুন মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হতো এবং চাষীদের লাভের পরিমাণও বাড়ত কয়েকগুণ।
রুমা উপজেলার বটতলী পাড়ার বাদাম চাষী মংনু অং, মলি বম দুজন বলেন, বটতলী পাড়ায় বসবাসরত ৮০টি পাহাড়ি পরিবারের সকলেই কাজু বাদামের চাষ করে। প্রতিমণ কাজু বাদাম চার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ফলন নিয়ে বাজারে গিয়ে বসে থাকতে হয়না। পাইকারী ক্রেতারা পাড়ায় এসে কাজু বাদাম কিনে নিয়ে যান। গতবছরের তুলনায় এ বছর কাজু বাদাম বিক্রি করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বেশি পাবার স্বপ্ন দেখছেন তারা। মুনলাইপাড়ার কারবারি লিয়ান আং বলেন, গতবছর কাজুবাদাম বিক্রি করে প্রায় তিন লাখ টাকা পেয়েছি। মুনলাই পাড়ায় তিনি একা নন, তাঁর পাড়ার আরো ৫৩টি পরিবারের সবাই কমবেশি কাজু বাদামের চাষ করে। কিন্তু সরকারীভাবে কোনো ধরণের ঋণ সুবিধা তারা পাচ্ছেননা। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াই চাষ করার কারণে সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য থেকে আশানুরূপ লাভবান হতে পারছেনা চাষীরা। চাষীরা জানান, এ অঞ্চলে ব্যক্তি উদ্যোগেই কাজু বাদামের ছোট-বড় অনেকগুলো বাগান গড়ে উঠেছে। সম্ভাবনা থাকায় লাভজনক কাজু বাদাম দ্রুত গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে জেলায়। কাজু বাদাম সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে দীর্ঘদিন পরও বাজারজাত করা যায়। সহজে সংরক্ষণ করা যায় বলে পাহাড়ের দুর্গমাঞ্চল গুলোতেও চাষীরা কাজু বাদাম চাষে আগ্রহী হচ্ছে। তবে আহরণ ও সংরক্ষণে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যত্নশীল না হলে বাদামের রং কালো হয়ে যায় এবং কয়েক মাসের মধ্যে বাদামে পচন দেখা দেয়ার শঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাদামের গুনগতমান ভালো না হলে দামও পাওয়া যায় কম। বর্ষাকালে কাজু বাদামের ফলন হওয়ায় ফলটি সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা কিছুটা কঠিন। এছাড়া চাষীদের অনেকেরই ফল সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিকভাবে ধারণা নেই। তাই তারা ফল সংগ্রহে যত্নশীলও নয়।
স্থানীয় কাজুবাদাম ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, রুমা, থানচি এবং রোয়াংছড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত কাজু বাদাম সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করি। খোসা’সহ প্রতি মণ কাজু বাদাম চাষীদের কাছ থেকে ৩৫শ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে গুণগতমান অনুযায়ী বিভিন্ন দামে কিনে নেয়।
এ বিষয়ে কৃষি সমপ্রসারন বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভবতোষ চক্রবর্তী বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ একটি মনিটরিং টিম বাগান পরিদর্শন এবং কাজু বাদামের সম্ভাবনা যাছাই করে গেছেন। এ অঞ্চলে কাজু বাদামের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদা থাকায় লাভজনক এ চাষাবাদ বাড়ছে দ্রুত গতিতে। পূর্নবয়স্ক একটি কাজুবাদাম গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
শীতের শেষদিকে এবং বসন্তে ফুল আসে। বর্ষায় ফল সংগ্রহ করা যায়। চারা রোপণের পর গাছের বয়স চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। গাছ থেকে সুস্থ ফল সংগ্রহ করে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে, ভেজে প্যাকেটজাত করতে হয়। যথাযথভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় এবং মানবজায় না থাকায় চাষীদের অনেকেই আশানুরুপ দাম পাচ্ছেনা। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি কাজু বাদাম গাছ থেকে বিশ থেকে ত্রিশ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। আর একটি গাছ থেকে প্রায় ৪৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ