• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জের শুঁটকি পল্লিতে নারী শ্রমিকদের মজুরি মাছের পেটা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২০  

গোপালগঞ্জের শুটকি পল্লীগুলোতে মাছ কাটার বিনিময়ে নারী শ্রমিকদের দেওয়া হয় মাছের পেটা (মাছের নাড়ি-ভুড়ি)। তারা পেটা বিক্রি করে যে টাকা পান তা দৈনিক পারিশ্রমিকের চেয়ে বেশি। এ কারণে শ্রমিকরাও মজুরির চেয়ে পেটার বিনিময়ে কাজ করতে বেশি আগ্রহী। মাছ কাটার কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন গোপালগঞ্জের শত শত নারী।

গোপালগঞ্জে ১০ হাজার ৮৯০ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ঐতিহ্যবাহী চান্দার বিল। এখানে জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এক সময় এই বিলে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক মাছ ছিল। এই চান্দার বিলের কারণে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা মাছের অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত ছিল।

এছাড়াও জেলার পাঁচটি উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ১১৪টি বিল। আর এসব বিলের জেলেদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের মাছ কিনে শুটকি তৈরি করেন প্রস্তুতকারীরা। শুটকি তৈরির জন্য মাছ কাটা হয়। আর এ মাছগুলো কাটেন নারী শ্রমিকরা। মজুরি বাবদ তারা পান কেজি প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা। যদি টাকা না নেন তাহলে পান মাছের পেটা। পেটা বিক্রি করে শ্রমিকরা বেশি টাকা পান বলে তারা জানিয়েছেন। এ কারণে তারা টাকার চেয়ে পেটা নিতেই বেশি আগ্রহী।

সরেজমিন গোপালগঞ্জের শুটকি পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট বড় প্রায় ২ হাজার মাঁচা তৈরি করে শুটকি বানানো হচ্ছে। চারদিকে মাছের আঁশ ও পঁচা মাছের গন্ধে মাছি ভনভন করছে। কাক ডাকা ভোরে মাছ কাটতে আসেন শত শত নারী শ্রমিক। তারা শুটকির মাচার পাশে গোল হয়ে বসে দা-বটি নিয়ে ছোট-বড় নানা প্রজাতির টেংরা খৈলসা, পুটি, মলা, টাকি ও মেনি মাছ কাটেন।

মাছ কাটতে আসা জোৎস্না বৈরাগী বলেন, ‘আমরা খুব ভোর থেকে কাজ করি। প্রতিদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত কাজ করে ৮০ থেকে ১০০ টাকা মজুরি পাই। তবে মজুরি বাবদ মাছের পেটা নিলে তা বিক্রি করে বেশি টাকা পাই। আমি এখান থেকে যে আয় করি তা পরিবারের পেছনে ব্যয় করি। এতে আমার স্বামী ওপর চাপ কম পড়ে।’

আরেক শ্রমিক উজলী বালা বলেন, ‘আমরা অনেকেই এখানে মাছ কাটার কাজ করি। বেশি কাজ করলে বেশি মজুরি পাই। আমি দৈনিক ৮ থেকে ১০ কেজি মাছ কাটতে পারি। আমরা এখান থেকে পেটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। পেটা বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে যায়।

শুটকি প্রস্তুতকারী অমল বালা বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে মিঠা পানির মাছের শুটকি তৈরি ও বিক্রি করে আসছি। এখানে শুটকি তৈরির জন্য মাছ কাটতে এসে অনেকেই মজুরি হিসেবে টাকা না নিয়ে মাছের পেটা নেয়। আগের তুলনায় এখন দেশি মাছ কম পাওয়া যায়। দাম বেশি থাকায় শুটকি তৈরি ও বিক্রি করে আগের মতো লাভ হয় না। তাই শ্রমিকদেরও বেশি মজুরি দিতে পারি না। তবে আমার এখানে মাছ কাটার কাজ করে অনেক নারী শ্রমিক স্বাবলম্বী হয়েছেন।

মাছের পেটা দিয়ে কি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাছের পেটা কিনে আগুনে তাপ দিয়ে তেল তৈরি করি। পরে এ তেল আবার চ্যাপা শুটকি তৈরিতে ব্যবহার করে থাকি। বাজারে চ্যাপা শুটকির দাম বেশি। সারাদেশে এ অঞ্চলের বিভিন্ন ধরণের শুটকির চাহিদা রয়েছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ