• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মালিকের লাথিতে দাঁত গেলো চালকের!

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০১৯  

ব্যস্ত রাস্তায় চলতে গিয়ে কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দাগ পড়ে প্রাইভেটকারের গায়ে। গাড়ি থেকে নেমে ক্ষতির পরিমাণ দেখতে রাস্তায় বসে পড়েন প্রাইভেটকারের চালক জামাল মোল্লা। একই সময় গাড়ির মালিক ঈগল গুল কোম্পানির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন জনি বাইরে বের হয়ে এসে সজোরে ড্রাইভারের মুখ বরাবর লাথি মারেন। সঙ্গে সঙ্গেই চারটি দাঁত পড়ে যায় জামালের, নড়বড়ে হয়ে যায় আরো ১৪টি দাঁত!

এ ঘটনায় মোজাম্মেল হোসেন জনির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আহত চালক। তবে ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। মামলা করায় প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চালক জামাল মোল্লা।

ভুক্তভোগী জামাল বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৫ মার্চ রাতে ৯টার দিকে কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে রাজধানীর কালশী লোহার ব্রিজ এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে হালকা চাপা খায় আমাদের প্রাইভেটকার। এতে গাড়িতে সামান্য দাগ পড়ে। অবস্থা দেখতে আমি গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় বসে পড়ি। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে আমার মুখে লাত্থি মারেন মোজাম্মেল হোসেন জনি।

গাড়িচালক জামাল আরো বলেন, মুখে লাত্থি মারলে আমার চারটি দাঁত পড়ে যায়, মুখ থেকে রক্ত বের হতে থাকে। আহত অবস্থায় আমাকে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে মিরপুরের প্যারিস রোডে তার (জনি) শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয় ও বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়।

এক পর্যায়ে স্যার (জনি) আমার বুকে লাত্থি মারলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। ওইদিন রাত এগারোটার দিকে জ্ঞান ফিরলে দেখি, আমি রক্তাক্ত অবস্থায় প্যারিস রোডের পাশে পড়ে আছি। পরে রিকশায় পূরবী সিনেমা হলের সামনে আসি। রিকশাচালকের সাহায্যে আমি বাসায় যোগাযোগ করি ও হাসপাতালে ভর্তি হই।

জামাল আরো বলেন, প্রায় একমাস আমি ঢাকা ডেন্টাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। কিছুটা সুস্থ হয়ে গত ২১ এপ্রিল মো. মোজাম্মেল হোসেন জনির বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মামলা করি। মামলা নং- ৪৮/২৩৮।

আহত প্রাইভেটকারচালক বলেন, মামলা করায় আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে জানে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি বিচার চাই। আমি ক্ষতিপূরণ চাই।

এদিকে, গাড়ি চালক জামালের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো. মোজাম্মেল হোসেন জনি।  প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আপনি কি সেখানে ছিলেন? আপনি কি দেখেছেন? আমার কাছে হাজারটা প্রমাণ আছে, আমি লাত্থি মারিনি। জামালকে তিন হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হোসেন জনি বলেন, গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি দেখতে গিয়ে জামাল অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন তার দাঁত পড়ে যায়। মামলার অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

এ সময় আসিফ ইকবাল নামে একজন নিজেকে চিত্রনায়ক পরিচয় দিয়ে এ প্রতিবেদকের ওপর চড়াও হন। তিনি বলেন, আপনি কীভাবে সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজনকে অপবাদ দিচ্ছেন? আমারও বহু সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচয় আছে। আপনাকে আমি ফোন দেবো, ধরবেন, কথা আছে।

এ বিষয়ে পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুল হাসান উজ্জ্বল (মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা) বলেন, শুনলাম কোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন আসামি। আমি জামিনের কাগজ দেখিনি। তবে জামিন না হওয়া পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে এসআই উজ্জ্বল বলেন, তিনি (জনি) পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বাসায় যান না। যতো বড় কোম্পানির মালিকই হোক না কেন আমরা তাকে আইনের আওতায় আনবো। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা হবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ