• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বড়পুকুরিয়ার ২শ’ কোটি টাকা নিয়ে গেছে চীনা প্রতিষ্ঠান

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১১ মে ২০১৯  

ইচ্ছেকৃতভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখা ও প্রকল্প এলাকার উন্নয়ন কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না করায় এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ (এলডি) পাওয়ার কথা ছিলো বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির। কিন্তু উল্টো ওই চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একের পর এক অবৈধ সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে লিখিতভাবে এই অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সিএমসি কনসোর্টিয়ামের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কাজ না করলে তাদের ক্ষতিপূরণ (এলডি) দেয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ না করলেও তাদেরকে বিল দেয়া হয়েছে। এই বিলসহ যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য অতিরিক্ত বিল এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে চুক্তির বাইরে বিলসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়। পরপর চারটি পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসব বিষয়ে আপত্তি উঠলেও ওই কোম্পানির পক্ষে সাফাই গেয়ে ও সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে ওই বিল পাস করিয়ে নেয়া হয়। বিল পাস করার কৌশল হিসেবে চীনা কোম্পানি প্রায় সপ্তাহখানেক কয়লা উৎপাদন বন্ধ রাখে। এভাবে কোম্পানিকে জিম্মি করে কয়েক দফায় এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম প্রায় ১৮০ কোটি টাকা আদায় করে নিয়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, চীনা কনসোর্টিয়ামের সাথে বড়পুকুরিয়া কয়লা কোম্পানির চুক্তি অনুযায়ী কয়লার আদ্রতার (পানি) পরিমাণ ৫ দশমিক এক শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। এর বেশি থাকলে বাড়তি পানির দাম বাদ দিয়ে ঠিকাদারকে কয়লার দাম পরিশোধ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে অনেক বেশি পরিমাণ পানি থাকছে। অথচ বাড়তি পানির দাম বাদ না দিয়ে কয়লার সঙ্গে পানির একই মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে। আগে এধরণের ঘটনায় বিল ও রিটেনশন মানি আটকে রাখা হলেও বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান চীনা কোম্পানিকে ওই বিলগুলো পাইয়ে দেন। এর মধ্য দিয়ে বড়পুকুরিয়া কোম্পানি তার দাবি ছেড়ে দেয়ায় আর্থিকভাবে বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছর আগস্টে বড়পুকুরিয়া কয়লা কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চলতি দায়িত্ব নিয়েই অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন ফজলুর রহমান। প্রফিট বোনাস আটকে রেখে কয়লা খনি কোম্পানির স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবার কাছ থেকে মাথাপিছু ৪০ হাজার টাকা করে প্রায় ৫৮ লাখ টাকা আদায় করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনা কারণে বদলি, শোকজও করেন। গণমাধ্যমকে ভবিষ্যতে আর কোনো তথ্য না দিতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চিঠিও দেন। এসব ঘটনা তদন্তে পেট্রোবাংলা কমিটি গঠন করলে ফজলুর রহমান ওই কমিটির প্রধানের সাথে এরই মধ্যে চীন ঘুরে এসেছেন। তিনি এখনও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকায় তদন্ত কমিটির কাছে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। আর এতোকিছুর পরও পেট্রোবাংলা থেকে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার কারণ বড়পুকুরিয়া কোম্পানির দুই কর্মকতা। তারা হলেন- জেনারেল ম্যানেজার প্রশাসন (চলতি দায়িত্ব) সাইফুল ইসলাম দিপু ও ম্যানেজার (মাইনিং) মোশাররফ হোসেন।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানিতে সংঘটিত এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য শামসুর রহমান শরীফ বলেন, অভিযোগ নিয়ে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমানের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ