• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সকালে কম, বিকেল হলেই বাড়ছে পণ্যের দাম!

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১২ মে ২০১৯  

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনিটরিং সেল খুললেও তেমন কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। ভোক্তা অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অভিযানের ভয়ে  রাজধানীর বাজারগুলোতে সকালে দাম কম থাকলেও বিকেল হলেও বেড়ে যায় সব পণ্যের দাম। 

বেগুন, শসা, কাঁচামরিচ, লেবু, মাংসের দাম সকাল প্রতিদিনই সকাল থেকে থেকে বিকেলে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। সবজি বাজারের ক্ষেত্রেও থাকে এ প্রভাব। তবে রোজার অত্যাবশ্যকীয় কিছু পণ্যের দাম নতুন করে বাড়েনি। পুরনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, মাছ ও মাংস। 

রোববার (১২ মে) রাজধানীর শ্যামবাজার, দয়াগঞ্জ, নয়াবাজার, সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বেশি মুনাফার আশাতেই ইফতারের আগ দিয়ে এভাবে দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। বাজারে শসা কিনতে গেলে সকালে প্রতিকেজি শসা ৩০ টাকা করে রাখা হলেও আছরের পরে কিনতে গেলে কেজিপ্রতি ২০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ইফতার উপলক্ষে রোজাদারদের জিম্মি করে অধিক লাভের জন্য ঠকিয়ে দাম বাড়তি রাখা হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

বিক্রেতারা বলছেন, সকালের দিকে ক্রেতার চাপ কম থাকে। বিকেল হলে চাপ বেড়ে যায়। আমরা তখন চাহিদার তুলনায় যোগান দিতে পারি না। ফলে দাম বেড়ে যায়। এছাড়া গরিব মানুষ, ছোট ব্যবসা করি। আমরা যে দর ক্রেতাকে বলি সেই দামেই তো তারা কিনে নেন।

এদিকে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল খুলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশের যে কোনো স্থানের মূল্য বৃদ্ধির তথ্য সেলকে দেওয়ার জন্য ৯৫৪৯১৩৩, ০১৭১২-১৬৮৯১৭, ৯৫১৫৩৪৪ ও ০১৯৮৭-৭৮৭২০৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাভুক্ত বাজারগুলোতে বসানো হবে ডিজিটাল মূল্য তালিকার বোর্ড। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা সকালে মানলেও বিকেলে মানা হচ্ছে না। 

কারণ ৪টার পর সাধারণত কোনো মোবাইল কোর্ট মাঠে থাকে না বা অভিযান পরিচালনা করে না। ফলে বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে মাংস ব্যবসায়ীরা। তারা সকালে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫২৫ টাকা বিক্রি করলেও বিকেলে দাম রাখছে ৫৫০ টাকা।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশে চিনি, ছোলা, ডাল, তেল, চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমরা সার্বিকভাবে সন্তুষ্ট। এবার রমজানে মানুষের উপর চাপ পড়বে না। চালের দাম কমেছে, তাই কৃষকদের কাছ থেকে চাপ আসছে। রোজা সামনে রেখে আমাদের মনিটরিং টিম যথেষ্ট সচেতন। 

ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের ২১টি কাঁচাবাজার রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে মূল্যতালিকা হালনাগাদ করা খুব কষ্টসাধ্য। আবার অনেক সময়ই আমাদের লোকেরা চলে গেলে ব্যবসায়ীরা মূল্যতালিকা সরিয়ে ফেলেন। তাই আমরা নগর ভবন থেকেই যেন মূল্যতালিকা হালনাগাদ করতে পারি তার জন্য একে ডিজিটাল করছি। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে বাজারগুলোতে ডিজিটাল স্ক্রিন বোর্ড বসবে। সেখানে প্রতিদিনের মূল্যতালিকা নগর ভবন থেকেই দেওয়া হবে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজধানীতে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু নির্ধারিত সেই দাম মানছেন না মাংস ব্যবসায়ীরা। তারা ২৫ থেকে ৭৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন গরুর মাংস। এছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে মূল্যতালিকা নেই। এসব অভিযোগে রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজারের মাংস ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

বাজারগুলোতে নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী দেশি গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫২৫ টাকা এবং বিদেশি বা বোল্ডার গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫০০ টাকা ও মহিষের মাংস কেজি প্রতি ৪৮০ টাকায় বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে খাসির মাংস প্রতিকেজি ৭৫০ টাকা এবং ভেড়া ও ছাগীর মাংস প্রতিকেজি ৬৫০ টাকা ধরে বিক্রির জন্য এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। পহেলা রমজান থেকে ২৬ রমজান পর্যন্ত মাংসের এ দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সকালে অভিযানের ভয়ে এ দামে বিক্রি হলেও বিকালে ২০ থেকে ৭৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আগের সপ্তাহের মতো ব্রয়লার মুরগির কেজি সকালে ১৩০- ৪০ টাকা থাকলেও বিকেলে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়।

এছাড়া সকালে ভালোমানের দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। বিকেলে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, আর কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। বিকেলে পোয়া বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। একই সঙ্গে শসা সকালে বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বিকেলে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তবে বেড়েছে রসুনের দাম। গত সপ্তাহে রসুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে তা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাংস ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে আমরা গরুর মাংস ৫৫০ টাকায় কেজি বিক্রি করেছি। এখন সরকার ৫২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে আমাদের লাভ কম হয়। এজন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই দামে বিক্রি করলেও বিকেলে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করি। সকালে মোবাইল কোর্টের কারণে বিক্রি করতে পারি না।

এদিকে বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। প্রতিকেজি পেঁপে ৬০ টাকা, গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লেবু হালি মানভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতিকেজি বেগুন, কচুরলতি, করলা, পটল, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। ধুন্দল, ঝিঙা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি আঁটি লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ১০ থেকে ২০ টাকা, পুঁই শাক ও ডাটা শাক ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সবজির মধ্যে পটল ৪০-৫০, সজনে ডাটা ৬০- ৮০, বরবটি ৬০-৭০, কচুর লতি ৭০-৮০, করলা ৬০-৭০, ধুন্দল ৭০-৮০, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে টানা দুই সপ্তাহ দাম কমার পর ডিমের দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। শুধু ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের মতো ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ৮০-৮৫ টাকায়। মুদি দোকানে ও খুচরা বিক্রেতারা প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছেন ৭-৮ টাকায়।

ডিমের পাশাপাশি অপরিবতির্ত বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম। রুই, কাতলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০, আইড় ৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০, বেলে মাছ প্রকারভেদে ৭০০ টাকা, বাইন মাছ ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৮০০ টাকা, পুঁটি ২৫০ টাকা, পোয়া ৬০০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, পাবদা  ৬০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, শিং ৮০০, দেশি মাগুর ৬০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ১৮০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্য। বাজারে নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাও চাল ৯০ থেকে ৯৫। প্রতিকেজি খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ