• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

২ বছর না হতেই বাবাকে হারাল ‘জুনিয়র কিবরিয়া’

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০১৯  

বরিশাল: কাভার্ডভ্যানের চাপায় নিহত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট এস এম গোলাম কিবরিয়া মিকেল (৩১) দুই বছরের এক শিশু সন্তানের পিতা। সন্তানের নাম ওহি রাখলেও সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা আদর করে ডাকেন ‘জুনিয়র কিবরিয়া’ বলে।

 

আনন্দময় দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কিবরিয়ার চার ব্যাচ সিনিয়র বিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কিবরিয়া সবসময় যেমন হাসিখুশি ছিল, তেমন তার মধ্যে একটা প্রাণচাঞ্চল্য ভাব থাকত। তার মতো ওহিও খুব হাসিখুশি ও দুরন্ত। যখন ডিউটি থাকত না, তখন পরিবারের সঙ্গেই থাকত কিবরিয়া। বিশেষ করে, ছেলেকে নিয়ে ঘুরে বেড়াত।

তিনি বলেন, কিবরিয়ার একটি সিএনজি গাড়ি আছে, সেটায় অবসরে ছেলেকে নিয়ে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াত। মাছে মধ্যে ছেলে অফিসেও নিয়ে আসত। খুব ভালোবাসতো আর অবসর সময়ে সঙ্গে সঙ্গে রাখত বলে আমরা সবাই মজা করে ওর ছেলেকে ‘জুনিয়র কিবরিয়া’ বলে ডাকি। বাবাকে ছাড়া ‘জুনিয়র কিবরিয়ার’ কেমন দিন কাটাবে, তা জানি না। সত্যি বলতে, আমরাও ভাবিনি, এত অল্প বয়সে কিবরিয়াকে হারাতে হবে। দুই বছরের শিশু সন্তান এত তাড়াতাড়ি বাবাকে হারাবে, তা কি কেউ কখনো আশা করেছে? 

নিহতের সহকর্মীরা জানান, ডিউটি শেষে সার্জেন্ট কিবরিয়া বাসায় ফেরার পর থেকেই ছেলে ‘জুনিয়র কিবরিয়া’ বাবার সঙ্গেই থাকত। বাইরে গেলেও মনে হত, বাবাকে ছাড়া তার চলে না। একসঙ্গে কাটানো সময়গুলোতে এক মুহূর্তও বাবাকে চোখের আড়াল হতে দিত সে।

কিবরিয়ার ব্যাচমেট সার্জেন্ট টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র এক মাস আগে ‘জুনিয়র কিবরিয়া’র বয়স দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। জন্মদিন পালনের সময় বাবার সঙ্গে অনেক আনন্দ করেছে। কিন্তু, এখন কী হবে! আমরা সে জন্মদিনে গিয়ে কিবরিয়া ও তার পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করেছি, খাওয়া-দাওয়া করেছি। এর কয়েকদিন পরেই ছেলেসহ সবাইকে একা করে না ফেরার দেশে চলে গেল কিবরিয়া।

জানা যায়, গুরুতর আহত সার্জেন্ট কিবরিয়াকে যখন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়, তখন মায়ের সঙ্গেই ছিল দুই বছরের ওহি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কিছু বুঝুক, আর না বুঝুক, মায়ের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে প্রায় পুরোটা সময় কেঁদেছে ওহি। আর যতক্ষণ চুপ ছিল, তথনও ভারাক্রান্ত মনেই ছিল সে। 

সার্জেন্ট এস এম গোলাম কিবরিয়ার অকাল মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এক শোক বিবৃতিতে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্ট কিবরিয়ার এ অকাল মৃত্যুতে একটি সুন্দর আগামীর মৃত্যু হয়েছে। বিবৃতিতে শোকাহত পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীসহ সবার প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন মেয়র। এর আগে, সোমবার (১৫ জুলাই) রাতে ঢামেক হাসপাতালে আহত কিবরিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি।

গত সোমবার (১৫ জুলাই) সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে কাভার্ডভ্যানের চাপায় গুরুতর আহত হন। পরে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টায় বরিশাল পুলিশ লাইন মাঠে কিবরিয়ার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে তার মরদেহ। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ