• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

হবিগঞ্জে জমির জন্য ভাতিজাকে খুন করিয়েছে বিজিবি সদস্য চাচা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৯  

হবিগঞ্জে একখণ্ড জমির জন্য ভাতিজাকে খুন করে নদীতে লাশ ফেলে দিয়েছে বিজিবি সদস্য চাচা। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। লাশের পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে তাকে জুরাইন কবরস্থানে দাফনও করা হয়।

 

এরপর এক কিশোরের তোলা মাইক্রোবাসের ছবির ওপর ভিত্তি করেই হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। অপর দুই পেশাদার খুনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নজরদারীতে রাখা হয়েছে বিজিবি সদস্য সাদেক মিয়াকে।

বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। আসামিদের দেওয়া স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি জানান, চুনারুঘাট উপজেলার পাট্টাশরিফ গ্রামের দুলাল মিয়া তার চাচা বিজিবি সদস্য সাদেক মিয়ার বাড়ির সামনের ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন তার ভাতিজা দুলা মিয়া। জমিটির ওপর সাদেক মিয়ার লোভ ছিল। জমিটি পেতে তিনি ভাতিজার বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমাও করে। শেষ পর্যন্ত কোন ফল না পেয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

সে ঢাকায় তার পরিচিত কিলারদের সঙ্গে কথা বলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ জুন একটি মাইক্রোবাসযোগে কিলারদের চুনারুঘাটের পাট্টাশরিফ গ্রামে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের সহযোগিতা করে সাদেক মিয়ার ভাগ্নে আফরাজ মিয়া। ঘটনার সময় দুলা মিয়া একটি টমটমযোগে (ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক) স্থানীয় শাকির মোহাম্মদ বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে আসামিরা তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে।

এ সময় গ্রাম মাইক্রোবাস দেখে এক কিশোর গাড়িটির ছবি তুলে। পথে দুলা মিয়া পানি পান করতে চাইলে তাতে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে খাইয়ে দেয়। পরে ঢাকার হাজারিবাগে সিকদার মেডিকেরের পেছনে নিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়। ১৮ জুন নদীতে লাশ পড়ে আছে খবর পেয়ে হাজারিবাগ থানা পুলিশ গিলে মরদেহ উদ্ধার করে। পরিচয় না পেয়ে তারা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসামের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে তা দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় হাজারিবাগ থানায় পুলিশ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এর আগে ১৯ জুন নিহত দুলা মিয়ার ছোট ভাই ইদু মিয়া বাদী হয়ে ৩ জনকে আসামি করে চুনারুঘাট থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। নিহত দুলা মিয়া ৫ মেয়ের জনক।

পুলিশ সুপার জানান, অপহরণ মামলাটি খবর নেওয়ার পর নিহতের পরিবারের অবস্থা জেনে বিষয়টি তাকে বেশ পীড়া দিয়েছে। কোন ক্লু না পেয়ে মানসিকভাবে বেশ অশান্তিতেও ছিলেন। তদন্তটি সম্পূর্ণ নিজে তত্ত্বাবধান করেন। অবশেষে ওই গ্রামের এক কিশোরের তোলা গাড়ির ছবির বিষয়টি জানতে পারেন। তার কাছ থেকে ছবি নিয়ে মহাসড়কে বিভিন্ন টোল প্লাজার সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ভৈরব সেতুর সিসিটিভির ফুটেজে পাওয়া একটি গাড়ির সঙ্গে ছবির গাড়িটির মিল পাওয়া যায়। সে সূত্র ধরে মাইক্রোবাসের চালক ভোলা জেলার লালমোহন থানার টিটিয়া গ্রামের ইউসুফ সরদারকে ১৪ জুলাই ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার রায়ের বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার টামনিকোনাপাড়া গ্রামের মামুন মিয়াকে।

তারা উভয়েই ১৫ জুলাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয় ভারাটিয়া খুনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন ও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গৌরবধন গ্রামের শামীম সরদারকে। এর আগে ৩০ জুন সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল অহরণের অন্যতম সহযোগী সাদেক মিয়ার ভাগ্নে আফরাজ মিয়াকে।

 

পুলিশ সুপার জানান, সাদেক মিয়া ৫১ বিজিবিতে কর্মরত আছেন। তাকে নজরদারীতে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে এ ঘটনায় আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ