• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া মুক্ত দিবস

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২৩  

কোটালীপাড়া মুক্ত দিবস আগামীকাল রোববার (৩ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের এইদিনে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর দখল মুক্ত হয়েছিল। কোটালীপাড়ায় সেদিন আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। অনেক দুঃখ বেদনার পরও সেদিন এলাকার মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দের জোয়ার। 
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ‘হেমায়েত বাহিনী’ কোটালীপাড়ার কাকডাঙ্গা রাজাকার ক্যাম্পে হামলা করে সেটির পতন ঘটায়। রাজাকার ক্যাম্পের সদস্যরা হেমায়েত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। রাজাকার ক্যাম্পের পতনের মধ্য দিয়ে ৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে গোপালগঞ্জের মধ্যে প্রথম কোটালীপাড়া হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের দখল মুক্ত হয়। 
মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ‘হেমায়েত বাহিনী’র সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ লুৎফর রহমান জানান, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ওইসময়ে এদেশে বেশকিছু অঞ্চলে গঠিত হয়েছিল কয়েকটি বাহিনী। ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চল  নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘হেমায়েত বাহিনী’। 
তিনি জানান, কোটালীপাড়ার সন্তান তৎকালিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈনিক হেমায়েতউদ্দিন মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তান থেকে দেশে পালিয়ে আসেন। গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। কোটালীপড়ায় তিনি একটি মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তোলেন। যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।  
কোটালীপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ন হয় হেমায়েত বাহিনী। ৭২টি গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত হেমায়েত বাহিনী যুদ্ধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনে। হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে এই বাহিনীর ১৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধ  চলাকালে হেমায়েত বাহিনীর সদস্যরা ১৩৪টি অপারেশন পরিচালনা করেন। এর মধ্যে রামশীলের যুদ্ধ অন্যতম। এছাড়া উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয় হরিণাহাটি, মাটিভাঙ্গা, বাঁশবাড়িয়া, ঝনঝনিয়া, জহরের কান্দি, কোটালীপাড়া সদর প্রভৃতি স্থানে। এছাড়া ছোট যুদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকটি। হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন ঐতিহাসিক রামশীলের যুদ্ধে মারত্মকভাবে আহত হন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য দেশ স্বাধীনের  পর হেমায়েত উদ্দিনকে রাষ্ট্র ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভুষিত করে। 
গোপালগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে হেমায়েত বাহিনীর অবদানকে স্মরনীয় করে রাখতে সরকার কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে হেমায়েত বাহিনী স্মৃতি জাদুঘর করে দিয়েছে। জাদুঘরটি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক বহন করছে। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ