• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সংস্কারে ধীরগতিতে বেহাল জয়পুরহাটের ৮ সড়ক, মহাদুর্ভোগ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০১৯  

জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কসহ আটটি সড়কে কচ্ছপ গতিতে চলছে সংস্কার কাজ। এমনিতেই খারাপ অবস্থা সড়কগুলোর; এরমধ্যে আবার দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ চলায় সুযোগ করে নিয়েছে বৃষ্টি আর ধুলাবালি। এবার পানি-কাদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খানাখন্দে ভরে গেছে সড়কগুলো। এত করে মহাদুর্ভোগে পড়েছে জয়পুরহাটের লাখ লাখ মানুষ।

সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবিতে মোটর মালিক-শ্রমিক সমিতিসহ সাধারণ নাগরিক অনেক সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছে ইতোমধ্যে। এতকিছুর পরও সড়ক বিভাগ বলছে, বর্ষা মৌসুম ও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে মাঝখানে কিছুটা সময় কাজ ধীরগতিতে চললেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, জয়পুরহাট-বগুড়ার ৫৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে জয়পুরহাট থেকে মোকামতলা পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার অংশ প্রশস্তকরণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড, হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড, রুহুল আমিন ভূঁইয়া রাইজিং কনস্ট্রাকশন ও প্যারাডাইস ট্রেডার্স। দরপত্র অনুযায়ী সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে মাটি খুঁড়ে খোয়া-বালু দিয়ে ভরাট করার কথা। এ ছাড়া পুরানো পিচ-খোয়া তুলে আলাদা দুই বেডে বিটুমিনের চূড়ান্ত লেয়ার দেওয়ার কথা। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে নাভানা কনস্ট্রাকশন। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। প্রায় একই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরও।একইভাবে জয়পুরহাট-হিলি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও হিচমী-পুরানাপৈল বাইপাসের ৩০ কিলোমিটার, আক্কেলপুর-ক্ষেতলালের ৩৬ কিলোমিটার, ক্ষেতলাল-ঝোপগাড়ী-পাকার মাথা-ক্ষেতলাল-জয়পুরহাট-রাজা বিরাট-গোবিন্দগঞ্জের ২১ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের কাজ পায় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে না দেওয়ায় প্রায় সবকয়টি সড়কে বর্ষা মৌসুমে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে কাদা পানি জমে থাকছে। আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালি উড়ছে।

জয়পুরহাট জেলার আটটি সড়কের ১০৮ কিলোমিটার অংশ প্রশস্ত করার জন্য ৩৩১ কোটি ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৬৫ টাকার টেন্ডার পাস হয়। কিন্তু অধিকাংশ সড়কের কাজের মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হলেও এখনও বুঝিয়ে দিতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

জয়পুরহাট-আক্কেলপুর সড়কের বাসচালক আফতাব মিয়া, ট্রাকচালক রইচ উদ্দিন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মুজিবুর রহমান জানান, স্বাধীনতার পর এমন দুর্ভোগ কোনো সড়কে দেখেননি তারা। সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণের নামে মাসের পর মাস যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, সেটি যেন দেখার কেউ নেই।

অন্যদিকে, জয়পুরহাট-ক্ষেতলাল সড়কের পাশের বাসিন্দা শারফুল ইসলাম, শাহিনুর রহমান, আনোয়ারুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, দ্রুত কাজ না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে রাস্তাগুলোতে পানি জমে থাকছে এবং শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। জানি না এ দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি পাব।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আনিছুর রহমান লিটন বলেন, সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে থাকায় প্রতিনিয়ত আমাদের যানবাহনগুলোর চাকা পাংচারসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

একইভাবে জয়পুরহাট জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আক্ষেপের সঙ্গে তারা জানান, সড়কগুলোর সংস্কার কাজ দ্রুত করার দাবিতে ইতোমধ্যেই আমরা দফায় দফায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু এরপরও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট সওজের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিক বলেন, বর্ষা মৌসুম ও অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় মাঝখানে কিছুটা সময় ধীরগতিতে কাজ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের এক অংশ ২৩ অক্টোবর আরেক অংশ ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বর্ধিত করা হয়। যদি এসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারে, তাহলে বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ