• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো বিশ্ব ইজতেমা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হয়েছে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকেভাবে চার দিনব্যাপী ইজতেমা শুরু হয়। আগামীকাল শনিবার মাওলানা সা'দ বিরোধীদের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মোনাজাত শেষে সা'দ বিরোধীরা ময়দান ছেড়ে চলে যাবেন। পরে মাওলানা সা’দপন্থীদের পরিচালনায় রবিবার থেকে ফের ইজতেমা শুরু হবে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ থেকে মাওলানা সা’দ বিরোধীদের ইজতেমা শুরু করার কথা ছিল। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারই (১৪ ফেব্রুয়ারি) ইজতেমা শুরু করে দেন সা’দ বিরোধীরা।

ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, ‘ফজরের নামাজের পর থেকে উর্দুতে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুল বয়ান শুরু করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের নোয়াখালীর মাওলানা নূরুর রহমান। ইজতেমাস্থলের বয়ান মঞ্চ থেকে মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ২৪টি ভাষায় তা তরজমা হচ্ছে।’

শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে বৃহত্তর জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন কাকরাইলের মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের।

উল্লেখ্য, তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুই পক্ষকে সমঝোতায় এনে অভিন্ন ইজতেমা আয়োজনের চেষ্টা ছিল সরকারের। তবে মাওলানা সা’দকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ অনড় থাকায় দফায় দফায় বৈঠক করেও অভিন্ন ইজতেমা আয়োজনে একমত করা যায়নি তাদের। সর্বশেষ ৫ ফেব্রুয়ারি তাবলিগের দুপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে পৃথকভাবে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় এ বছর চারদিন ইজতেমা হবে। সা’দবিরোধী অংশ ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা পরিচালনা করবে। সাদ অনুসারী অংশ ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা পরিচালনা করবে। দুই দিন করে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত হলেও দুইপক্ষই একদিন করে বাড়িয়েছে তাদের কার্যক্রম। সা’দবিরোধীরা সরকার নির্ধারিত সময় থেকে একদিন আগে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি তিন দিন ইজতেমা করবে। আর বিরোধীরা সরকার নির্ধারিত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারির পর ১৯ ফেব্রুয়ারিও ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

এবারে ৬৪ জেলার মুসল্লিদের জন্য পুরো ময়দানকে ৫০টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তা অনুযায়ী ৬৪ জেলার মুসল্লির জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

হজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ হলো এ বিশ্ব ইজতেমা। ফজরের নামাজের পর থেকে থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির আসকার ইবাদত বন্দেগিতে টঙ্গী জিকিরের শহরে পরিণত হয়েছে। ভোর থেকে দূরদূরান্তের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমায় বৃহত্তর জুমার নামাজের জামাতে অংশ নিতে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন।

ইজতেমার মুরুব্বিদের দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব ইজতেমা ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বর্তমান স্থলে স্থানান্তর করা হয়। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, ‘পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কয়েকটি স্তরে বিভক্ত হয়ে পোশাক ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর, তুরাগ নদীতে চেকপোস্ট ও নৌ-টহল রয়েছে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র‌্যাব কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।’

শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজ আদায় করতে ঢাকা থেকে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারাসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ভিআইপি অতিথিরাও ইজতেমা ময়দানে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ