• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

চা এলো কেমন করে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

শীতের সকাল কিংবা বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় গরম এক কাপ চায়ের কাপে চুমুক- উষ্ণতায় মন ভরিয়ে দেয়। চা কখন, কীভাবে আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠলো এর পেছনে রয়েছে বহু বছরের পুরনো ইতিহাস। যদিও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং বিশ্বব্যাপী নানান চাহিদার কারণে চা পাতার স্বাদ এবং গন্ধে এসেছে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন, তবুও এর আবেদন একই রকম রয়ে গেছে।

পৃথিবীতে যতো ধরনের চা রয়েছে তার সবই এসেছে এক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে। ‘ক্যামেলিয়া সিনেনসিস’ নামক গুল্ম জাতীয় চির সবুজ গাছ থেকে পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে চা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। তবে বিভিন্ন ধরনের চায়ের পার্থক্য মূলত চাষের ধরন, পরিস্থিতি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার ভিন্নতার কারণে হয়। পৃথিবীতে সাধারণত দুই ধরনের চা গাছ পাওয়া যায়- চীনজাতীয় চা গাছ এবং আসামজাতীয় চা গাছ। তবে চা পাতার শুরুর গল্প কিন্ত চীনজাতীয় চা গাছ থেকেই।

ঠিক ভেবেছেন, প্রথম চা পাতার আবিষ্কার হয় চীনে। সেখানেও রয়েছে এক রোমাঞ্চকর গল্প। পাঁচ হাজার বছর আগে ‘শেন নাং’ নামে চীনের এক স্বাস্থ্যসচেতন সম্রাট ছিলেন। মজার বিষয় ‘শেন নাং’ শব্দটির অর্থ স্বর্গীয় কৃষক। আর স্বর্গের এই কৃষকের হাত ধরেই পৃথিবীতে চায়ের আগমন৷ শেন নাং একবার ঘোষণা দিলেন, তার রাজ্যের সকলকে পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। একদিন বিকেলে রাজকার্যের ক্লান্তি দূর করার জন্য তিনি গাছের নিচে বসে গরম পানি পান করছিলেন, হঠাৎ তার পানির পাত্রে উড়ে এসে পড়ে দুটো অচেনা পাতা। পাতাগুলো পানি থেকে বের করার আগেই দারুণ এক রং ছড়িয়ে পরল পাত্রজুড়ে। সেই নির্যাসে বেরিয়ে এলো মৃদু সুগন্ধ৷ সম্রাট কৌতূহলবশত সেই পানি পান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। পান করার কিছুক্ষণ পর তিনি অন্যদিনের চেয়ে অনেক বেশি চনমনে অনুভব করলেন৷ নিমিষেই কেটে গেল ক্লান্তি।  এরপর সম্রাট খুঁজে বের করলেন সেই আজানা পাতার গাছ- ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। সেই থেকেই চায়ের যাত্রা শুরু৷

তবে চীনজুড়ে চা পানের প্রচলন হয় ওষুধ হিসেবে। ইংল্যান্ডের নামকরা চায়ের ব্রান্ড টাইফু-এর চীনা অর্থ হলো চিকিৎসক। গবেষণা থেকে জানা যায়, পানীয় হিসেবে পান করা চায়ে ৭ শতাংশ থিওব্রোমিন ও ২৫ শতাংশের বেশি পলিফেনলস রয়েছে। থিওব্রোমিন শ্বাসকষ্টের জন্য উপকারী এবং পলিফেনলস ক্যানসার প্রতিরোধী৷  তবে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চা পাতার উৎপাদন শুরু হয় ১৬৫০ সালে। ১৬১০ সালে ইউরোপে চায়ের প্রবেশ ঘটে পর্তুগীজদের হাত ধরে৷ এর আরও পরে ১৭০০ সালের দিকে ব্রিটেনে চা জনপ্রিয়তা পায়। আর ঠিক তারপরই আমাদের উপমহাদেশে হয় চায়ের আগমন।

নতুন বিদেশি আদবকায়দা খাদ্যাভ্যাসের মতো, চা পাতাকেও ইংরেজরা ১৮১৮ সালে ভারতবর্ষে নিয়ে আসে। তবে বাঙালি জীবনে নতুন অভ্যাস প্রবেশ করানো খুব একটা সহজ ছিলো না৷ ইংরেজ সরকার শুরুর দিকে নামমাত্র মূল্যে কখনো বা বিনা পয়সায় চা পাতা সরবরাহ করেছে। ব্রিটিশরা চেয়েছিলো, আড্ডায় গল্পে এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকায় চা পাতা প্রবেশ করাতে৷ ‘অসম চা কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠার পর সংবাদপত্রে ইংরেজরা বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু করে। বিজ্ঞাপনে চা পান করাকে ম্যালেরিয়ানাশক, প্রাণশক্তি, জীবনশক্তির আধার বলেও তারা প্রচার করে। এরপর ইংরেজরা ১৮৫৭ সালে সিলেটে মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়।

বিশ্বজুড়ে চা তৈরির কৌশল নিয়েও শুরু হয় গবেষণা। শ্রীমঙ্গলের সাত রং চা তেমনই বৈচিত্র্যময়। দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন সাত রঙরে চায়ের মোহে। যদিও এর প্রস্তুত প্রণালী এখনও গোপন রয়েছে। চা পান আরও সহজ করে তুলতে ১৯০৯ সালে টমাস সুলিভ্যান টি ব্যাগ প্রবর্তন করেন। এভাবেই এগিয়ে চলেছে পাচঁ হাজার বছরের পুরোনো এক আজানা পাতার মানুষের বৈঠকখানায় প্রবেশের গল্প।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ