• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

‘ভারত বয়কট’র প্রভাব নেই, কলকাতায় বাংলাদেশিদের ভিড়ে জমজমাট ঈদবাজার

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২৪  

ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। কিন্তু কলকাতায় চলছে প্রচণ্ড দাবদাহ। সে কারণে নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন, চড়া রোদ-গরমে এবারের ঈদের বাজার সেভাবে জমবে না। কিন্তু সেই আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে ঠিকই জমে উঠেছে নিউমার্কেটসহ কলকাতার বিভিন্ন শপিংমলের ঈদবাজার। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এরইই মধ্যে কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছে লোকজন।

বিক্রেতারা বলছেন, সকালের দিকে কেনাবেচা একটু জমলেও বেলা বাড়তেই ক্রেতারা উধাও হয়ে যান। আবার বিকেল ৫টার দিকে ভিড় বাড়তে থাকে। এরপর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় চলা দায় হয়ে ওঠে নিউমার্কেট চত্বরে।

গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে কলকাতার নিউমার্কেট চত্বরে বাংলাদেশি পর্যটক সেভাবে না থাকলেও এবারের ভিড় চোখে পড়ার মতো। এই এলাকার এক কাপড় ব্যবসায়ীর মতে, গত বছরের থেকে এবার ব্যবসা ভালো হচ্ছে তাদের। সাধারণত রমজানের শেষের দিকেই ক্রেতারা ঈদের বাজার করতে বেশি আসেন।

এ বছর নিউমার্কেট চত্বরের শপিংমলসহ সেখানকার কাপড়ের দোকানগুলোতে বাংলাদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের স্বতঃস্ফূর্ত আগমনে খুশি ব্যবসায়ীরা।

নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ী রাজেশ কুমার তিওয়ারি বলেন, গত বছরের থেকে এবার ভালো ব্যবসা হচ্ছে। আমরা ভাবিনি এবারের রমজানে এত ভালো ব্যবসা হবে।এখানকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপরেই বেশি নির্ভরশীল।

তিনি জানান, এ বছর বাংলাদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে নায়রা, আলিয়া, ঘারারা-সারারা, গাউন, কটনের ফেব্রিকের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, আজরাক সিল্ক, সামো সিল্ক। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে অরগাঞ্জা আনারকলি। 

রাজেশের বিশ্বাস, বাংলাদেশে ঈদের ছুটি এখনো শুরু হয়নি। শুরু হলেই কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ঢল নামবে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের ট্রেন্ড চলছে। তবে এর কারণে কলকাতায় ব্যবসা-বাণিজ্যে তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না বলেই জানিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

এক প্রশ্নের জবাবে রাজেশ কুমার তিওয়ারি বলেন, এগুলো ইউটিউব এবং ফেসবুকে যারা ছাড়ে, তারা নোংরামি করে। ভারত-বাংলাদেশের আগে যে সম্পর্ক ছিল, সেটাই আছে। এতে আমাদের বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। এত বছর ধরে ব্যবসা করছি, এই বয়কটের কথা আমি প্রথম শুনছি। আগে এগুলো শুনিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কলকাতার নিউমার্কেট চত্বরে শ্রী লেদার্স, সাউথসিটি মল, কয়েস্ট মল, এমবাজার, বাজার কলকাতা, সিমপার্ক মল, সিটি সেন্টার, বিশালসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে বাংলাদেশি পর্যটকরা ঈদের কেনাকাটা করছেন। জুতা থেকে শুরু করে থ্রি-পিস, নারীদের ব্যাগ, বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী, পাঞ্জাবিসহ নানা জিনিস কিনতে দোকানে দোকানে ভিড় করছেন তারা।

কলকাতায় ঈদের বাজার করতে এসেছেন বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার শিবচরের বাসিন্দা ইমাম হুসেন। তিনি বলেন, আমি প্রতিবারই ঈদের আগে কলকাতায় পোশাক কিনতে আসি। এখানে পোশাকের দাম কম এবং ভ্যারাইটিও থাকে অনেক। কেনাকাটা করে ফের বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবো। দেশে পরিবারের সঙ্গেই ঈদ করবো।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিষয়ে ইমাম হুসেন বলেন, এটি এক শ্রেণির লোকদের তৈরি। এতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। একটি অপপ্রচার চলছে। এই অপপ্রচার আমাদের সবাইকে মিলে রোধ করতে হবে। যারা মুখে বলছে বয়কটের কথা, তারাও দেখবেন কলকাতায় এসে কেনাকাটা করছে।

বাংলাদেশের ঢাকার বাসিন্দা ইলিয়াস তার বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতায় ঈদের কেনাকাটা করতে এবং ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ঈদের কেনাকাটা করলাম। নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য বিভিন্ন জিনিস কেনা হয়েছে। ঈদের আগেই দেশে ফিরে যাবো এবং পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবো।

সপরিবারে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা তানবীর। মা, স্ত্রী এবং মেয়ের জন্য একাধিক পোশাক কিনেছেন তিনি। মেয়ের জন্য শ্রী লেদার্সের ব্যাগ কিনে ফেরার পথে তানবীর বলেন, আমি প্রায়ই ব্যক্তিগত কাজে কলকাতা আসি। এবার কাজের ফাঁকে পরিবার নিয়ে ঘুরেও গেলাম এবং ঈদের কেনাকাটাও করা হলো। তবে ঈদ আমরা দেশে গিয়েই উদযাপন করবো।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ