• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

৯ জনকে কুপিয়ে-পিটিয়ে জখম, মামলা করায় ‘প্রাণনাশের হুমকি’

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০১৯  

কলমাকান্দা (নেত্রকোণা) থেকে ফিরে: নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়েছে নয়জনকে। এ ঘটনার পর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করায় উল্টো প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। সেজন্য জখম হওয়ার সাতদিন পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় চিকিৎসকদের সুপারিশ সত্ত্বেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে যেতে পারছেন না ওই নয়জন।

 

শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে কলমান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় আহতদের যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখা যায়। গত ৮ জুন দুপুরে পূর্ববিরোধের জেরে তুচ্ছ ঘটনায় উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধনুন্ধ গ্রামে এদের আটজনকে কুপিয়ে এবং একজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়। তাদের তখন উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

কোপে রক্তাক্ত ৮ জন হলেন- ধনুন্ধ গ্রামের সেতু মিয়া (৮৫), তার স্ত্রী রাবেয়া (৭০), মো. খলিল মিয়া (৬০), তার স্ত্রী কমলা খাতুন (৪৮), গোলাপ মিয়া (৫০), কল্পনা আক্তার (২২), ফারুক মিয়া (২৫) ও আমান উল্লাহ্ (২৮)। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে প্রতিবন্ধী শিশু শরীফ মিয়াকে (১০)। শিশুটি ছাড়া আহত প্রত্যেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন।

ঘটনার দিনই প্রতিবেশী অলফত আলী, মারফত আলী, আল আমিনসহ নয়জনকে আসামি করে মামলা করেন আমান উল্লাহ্। এদের মধ্যে মারফত আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনজন স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়েছেন। পলাতক বাকি পাঁচজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গোলাপ মিয়ার মেয়ে কলেজছাত্রী সালমা আক্তার ও ছেলে কলেজছাত্র নয়ন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবেশি অলফত আলীর বাড়ির সামনে দিয়ে মেহমান হেঁটে আসার জের ধরে ৮ জুন দুপুরে এ আটজনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। বর্বরতা থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি প্রতিবন্ধী শিশুটিকেও, তাকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। এদের হাসপাতালে আনার পরপরই চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু অর্থকড়ি না থাকায় এবং হামলাকারীদের পক্ষ থেকে প্রাণনাশের হুমকি আসতে থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

সালমা ও নয়ন বলেন, প্রতিবেশী অলফত আলী, মারফত আলী, আল আমিনসহ তার পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে কারণে-অকারণে শত্রুতা করছিলেন। বিবাদ বাঁধাতে মুখিয়ে থাকতেন তারা। ঘটনার দিন ৮ জুন সকালে অলফতদের বাড়ির সামনে দিয়ে খালু সৈয়দ আলী আমাদের বাড়িতে আসেন। খালু কেন তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে এলেন, সে কথা টেনে অলফতের স্ত্রী রুবিনা খাতুন, মারফতের স্ত্রী বিউটি আক্তার, আল আমিনের স্ত্রী রুপা আক্তার অকথ্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন।

‘আমরা প্রতিবাদ করলে অলফতদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে তারা দুপুরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে আব্বাকে (গোলাপ) হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। বাড়ি-ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর করে। বাধা দিতে গেলে পরিবারের নারী-শিশু প্রত্যেকের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আব্বা, আম্মাসহ বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো অলফতের পরিবারের লোকজন বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হাসপাতাল ত্যাগের নির্দেশের পাশাপাশি ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দিয়ে আসছে।’

পার্শ্ববর্তী সন্ধ্যাহলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার  বলেন, হামলা ও রক্তক্ষয়ী এ ঘটনায় পরিবারটি শেষ হয়ে গেছে। বড় অসহায় হয়ে পড়েছে তারা। থানায় মামলা হওয়ার পরও আসামিদের মধ্যে কোনো ধরনের ভীতি সৃষ্টি হয়নি, বরং বেপরোয়া হয়ে গেছে। পুলিশ যদি দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করতে না পারে তবে বড় কিছু ঘটার শঙ্কাও রয়েছে।

গোলাপের আরেক ছেলে কাজল বলেন, আহত সবাইকে চিকিৎসকরা ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলছেন। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার জন্য নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।

কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. সুরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, দু’জনকে মমেকে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে থাকতে পারেনি বা থাকেনি। পরে আবার তাদের কলমাকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতাল থেকে শুরু থেকেই তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য মমেকে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, মামলার আসামি মারফত আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর তিনজন স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়েছে। পলাতক বাকি পাঁচজনকে গ্রেফতার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ