• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফেরানোর দাবিতে শাহবাগে অবস্থান

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালসহ ছয় দফা দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটি সংগঠন।

তারা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস ছাড়া এই অবস্থান থেকে তারা সরবেন না। 

'মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম (চাকরিপ্রত্যাশী ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ)' ব্যানারে হাজারখানেক চাকরিপ্রত্যাশী শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেন।

ওই কর্মসূচি শেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।  ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে চার দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

রাত সাড়ে ৮টার দিকেও কয়েকশ আন্দোলনকারী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে 'মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই', 'একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার', 'কোটা কোটা কোটা চাই, ৩০ পার্সেন্ট কোটা চাই' স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালসহ সাত দফা দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদ’।

আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের বক্তব্য সুনির্দিষ্ট। শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোনো বার্তা না আসা পর্যন্ত আমরা এখান থেকে উঠব না, কারণ বাংলাদেশে সবাই বিক্রি হয়, শেখ হাসিনা বিক্রি হয় না।"

তিনি বলেন, "শেখ হাসিনা একসময় বলেছিলেন, যারা কোটা চায় তারা একত্রিত হোক। ওই সময় তাকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আমরা কাজ করেছি। মাঝে মাঝে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে একত্রিত হয়েছি, আজকে চূড়ান্তভাবে আমরা এখানে বসেছি। তিনি যেটা বলবেন, আমরা সেটা মাথা পেতে নেব, অন্য কোনো নেতার কথায় সরব না।"

আন্দোলনাকারীদের আরেক সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সনেট মাহমুদ বলেন, শুক্রবার সোনালী ব্যাংকের অফিসার পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পরীক্ষা ছিল। প্রায় ১৩ হাজার চাকরিপ্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের একটা বড় অংশ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। 

টাঙ্গাইল থেকে সোনালী ব্যাংকের অফিসার পদে পরীক্ষা দিতে আসা হামিদুর রহমান বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা সবাই তো আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান না। গ্রামে-গঞ্জে বহু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছে, যারা সবসময় এই আন্দোলনে আসতে পারে না। আমরা আজকে এসেছি। আমরা চাই সরকার অবিলম্বে আমাদের দাবি মেনে নেবে।"

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান রাত ৯টার দিকে  বলেন, "জন ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে আন্দোলনকারীদের আমরা কয়েকবার উঠে যেতে বলেছি। তবে যাব যাব করে সময়ক্ষেপণ করেও উনারা এখনো যাননি।"

 

ছয় দফা দাবি

১. জাতির পিতা ও তার পরিবারসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ‘অবমাননাকারীদের’ বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

২. সরকারি চাকুরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, সংরক্ষণ, বিশেষ কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারি থেকেই শতভাগ কোটা বাস্তবায়ন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংরক্ষিত পদগুলে বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা।

৩. রাজাকারসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, তাদের বংশধরদের সরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও নিয়োগের অযোগ্য ঘোষণা করা এবং চাকরিতে যারা আছে, তাদের চাকুরিচ্যুত করা।

৪. মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পারিবারিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

৫. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সকল অপ্রপ্রচার বন্ধ করা, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ‘স্ব-ঘোষিত রাজাকার’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলায় জড়িতরাসহ ‘অরাজকতা সৃষ্টিকারী স্বাধীনতাবিরোধীদের’ বিরুদ্ধে দ্রুত আইনুনাগ ব্যবস্থা নেওয়া।

৬. সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজম্মের বয়সসীমা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করা।

গতবছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।

ওই পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেয় সরকার।

কমিটি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করলে গত বছরের ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভা তাতে সম্মতি দেয়।                         

পরদিন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর ৪০তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও কোটা না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি।

ওই পরিপত্র জারির পর অগাস্টে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ ব্যানারে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে টানা ছয় দিন বিক্ষোভ করেন একদল চাকরিপ্রার্থী। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময় বলেছিলেন, জোরালো আন্দোলন হলে নতুন করে কোটার ব্যবস্থা হতেও পারে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ