• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসিতে ৮২ আপিল

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০১৮  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাতিল প্রার্থীরা প্রার্থিতা ফেরত পেতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের
সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে শুরু করেছেন। বলা যায়, অভিযোগ আবেদনের হিড়িক পড়েছে নির্বাচন
কমিশনে (ইসি)। বাতিল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোমবার পর্যন্ত ৮২টি অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন ভবনের
সংশ্লিস্ট দপ্তরে। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এ অভিযোগ জমার দেওয়ার সুযোগ পাবেন সংক্ষুব্ধ
প্রার্থীরা।
সোমবার আপিল শুরুর দিনেই আলোচিত প্রার্থী সাবেকমন্ত্রী মীর নাছির উদ্দীন, গোলাম মাওলা রনি,
ইমরান এইচ সরকার, রেজা কিবরিয়া, হিরো আলমসহ বাছাইয়ে না টিকা ৮২ জন প্রার্থী ইসিতে এসে আপিল
করেছেন। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে মনোনয়নে বাদ পড়া
নেতারা আপিল করে পুনরায় তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। চট্টগ্রাম-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও
সাবেক মন্ত্রী মীর নাছির উদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার
মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সরকারের চাপে রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।
আপিলে প্রার্থিতা দেবে বলে আশা করি।
পটুয়াখালী-৩ আসনের প্রার্থী গোলাম মওলা রনি বলেন, সামান্য ভুলের কারণে বাতিল হয়েছে। এটা বাতিলের
মতো ভুল ছিল না, যেখানে ইসি থেকে ছোট ভুলের জন্য বাতিল না করার নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে আশাবাদী।
কমিশনের প্রতি আস্থা আছে। আশা করি আমি নির্বাচন করার সুযোগ পাবো।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার ছিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন। সারাদেশে দাখিল করা ৩০৬৫টি
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ২২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ এবং ৭৮৬টি বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং
কর্মকর্তারা। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন।
এ পর্যন্ত যারা আপিল করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, চট্টগ্রাম-৫ আসনে মীর নাছিরউদ্দীন, পটুয়াখালী-
৩ আসনের গোলাম মাওলা রনি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে নবাব মোহাম্মদ শামছুল হুদা, বগুড়া-৭ খোরশেদ
মিলটন, খাগড়াছড়িতে আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ঝিনাইদাহ-১ আব্দুল ওয়াহাব, ঢাকা-২০ তমিজউদ্দিন,

সাতক্ষীরা-২ মোহাম্মদ আফসার আলী, কিশোরগঞ্জ-২ মো. আখতারুজ্জামান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ মো.
তৈয়ব আলী, মাদারীপুর-৩ মো. আব্দুল খালেক, দিনাজপুর-২ মোকাররম হোসেন, ঝিনাইদাহ-২ অবসরপ্রাপ্ত
লেফটেন্যান্ট আব্দুল মজিদ, ঢাকা-১ খন্দকার আবু আশফাক, দিনাজপুর-৩ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম,
জামালপুর-৪ ফরিদুল কবির তালুকদার, পটুয়াখালী-৩ মো. শাহাজাহান, পটুয়াখালী-১ মো. সুমন সন্যামত,
দিনাজপুর-১ পারভেজ হোসেন, মাদারীপুর-১ জহিরুল ইসলাম মিন্টু, সিলেট-৩ কাইয়ুম চৌধুরী, ঠাকুগাঁও-৩
এসএম খলিলুর রহমান ও জয়পুরট-১ আসনে মো. ফজলুর রহমান, পাবনা-৩ হাসাদুল ইসলাম, ফেনী-১
মিজানুর রহমান, কিশোরগঞ্জ-৩ ড. মিজানুল হক, ময়মনসিংহ-৪ আবু সাঈদ মহিউদ্দিন, নেত্রকোনা-১ মো
রুবেল ইসলাম, পঞ্চগড়-১ তৌহিদুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-২ এনামুল হক খান, মানিকগঞ্জ-২ আরিফুর
রহমান খান, খুলনা-২ এস এম এরশাদুর জ্জামান, নটোর-১ নীরেন্দ্রনাথ শাহা, সিরাজগঞ্জ-৩ আইনাল হক,
ঢাকা-১ আইয়ুব খান, বগুড়া-৩ আব্দুল মুহিত, গাজীপুর-২ মাহবুব আলম, বগুড়া-৬, এ কে এম মাহাবুবুর
রহমান, রাঙ্গামাটি অমর কুমার দে, গাজীপুর-২ মো. জয়লান আবেদীন, ব্রাহ্মনবাড়িয়া-৬ জেসমিন নুর বেবী,
রংপুর-৪ মোস্তফা সেলিম, খুলনা-৬ এস এম শফিকুল আলম, বগুড়া-৪ মো. আশরাফুল হোসেন (হিরু আলম)
হবিগঞ্জ-২ মো. জাকির হোসেন, হবিগঞ্জ-১ জোবাইর আহম্মেদ, ঢাকা-১৪ সাইফুদ্দিন আহম্মেদ,
সাতক্ষীরা-১ মুজিবুর রহমান, ময়মনসিংহ-৭ জয়নাল আবেদীন, ব্রাহ্মনবাড়িয়া-৩ আব্দুল্লাহ আল হেলাল,
ময়মনসিংহ-২ মো আবু বক্কর সিদ্দিক, শেরপুর-২ এ কে এম মোখলেছুর রহমান, হবিগঞ্জ-৪ মাওলানা মো
সোলাইমান খান, নাটোর-৪ আলাউদ্দিন মৃধা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া-৩ মো বশির উল্লাহ, নওগা-৪ মো আফজাল
হোসেন, কুড়িগ্রাম-৪ ইউনুস আলী, বরিশাল-২ আনিসুজ্জামান, ঢাকা-৫ সেলিম ভুইয়া, ঝিনাইদহ-৩
কামরুজ্জামান, মৌলভীবাজার-২ মহিবুল কাদির চৌধুরী, কুমিল্লা-৩ কে এম মুজিবুল হক, মানিকগঞ্জ-১
তোজাম্মেল হক, সিলেট-৫ ফয়েজুল মনির চৌধুরী, ময়মনসিংহ-৩ আহম্মেদ তাইবুর রহমান, ঝিনাইদহ-৪
আব্দুল মান্নান, ব্রাহ্মনবাড়িয়া-৩ সৈয়দ আহম্মদ লিটন, ফেনী-৩ হাসান আহম্মদ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া-৫
মামুনুর রশিদ, ব্রাহ্মনবাড়িয়া-২ আবু আসিফ আহম্মদ, ঢাকা-১৪ জাকির হোসেন, ময়মনসিংহ-১০
হাবিবুল্লাহ বেলালী, পঞ্চগড়-২ ফরহাদ হোসেন আজাদ, জামালপুর-৪ মামুনুর রশিদ, মানিকগঞ্জ-৩
আতাউর রহমান আতা, ময়মনসিংহ-৮ এম এ বাশার, ঢাকা-১৪ আবু বক্কর সিদ্দিক, বগুড়া-২ আবুল কাশেম,
নেত্রকোনা-১ শাহ কুতুব উদ্দিন তালুকদার, কুড়িগ্রাম-৩ আব্দুল খালেক, কুড়িগ্রাম-৪ মাহাফুজা রহমান।
এক শতাংশ ভোটার না থাকা, লাভজনক পদে থাকা, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা, আয়কর রিটার্ন দাখিল না
করা, ঋণখেলাপি ও দণ্ডপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, আপিল করতে ইসিতে এসে বগুড়া-৪ আসনে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে
হিরো আলম বলেছেন ভিন্ন কথা। মনোনয়নপত্রে কোনো ভুল না থাকার পরও ষড়যন্ত্র করে তাকে
থামানোর চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিরো থেকে হিরো হয়েছি। ষড়যন্ত্র করে
আমাকে থামানোর চেষ্টা চলছে। এমপি-মন্ত্রীরা চায় না প্রজারাও রাজা হোক। ভোট যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত
লড়াই করে যাব। কমিশনে আপিল করেছি, আশা করছি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুয়োগ পাব। এদিকে, আপিল না
করলেও এ বিষয়ে তথ্য নিতে সোমবার কমিশনে এসেছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ
সরকার। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে অজুহাতে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, তাতে
মনে হয় না কারও মনোনয়নপত্র টিকবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন,
তাদের সবার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বিভিন্ন অজুহাতে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, যেসব মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষিত হয়েছে, সেসব
প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশনে আপিলের সুযোগ পাবেন। ৬, ৭,৮
ডিসেম্বর আপিল শুনানি করে নিষ্পত্তি করবে কমিশন। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ
দিন। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ এবং ৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে।
প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে আবেদন জামালপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফরিদুল হক খানের
মনোনয়ন বাতিল চেয়ে ইসিতে কাছে আবেদন করেছেন সংক্ষুব্ধ এক ব্যক্তি। সোমবার মুস্তাফিজুর রহমান
নামের ওই ব্যক্তি সিইসির কাছে এ আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, ফরিদুল হক খান মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামার তথ্যবিবরণীতে নিজের আয়কর
বিবরণী প্রকাশ বা প্রদান করেননি। তিনি তার স্ত্রী আফরোজা হকের আয়কর প্রত্যায়নপত্র দাখিল
করেছেন যা নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের শামিল। এ অবস্থায় ফরিদুল হক খানের প্রার্থীতা বাতিল করার
জন্য সিইসির প্রতি অনুরোধ জানান সংক্ষুব্ধ মুস্তাফিজুর রহমান।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ