• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

সরাসরি আন্তর্জাতিক কলের বাজারে ধস

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২০  

ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কলের বাজার ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। তাই দেশের বাজারে সরাসরি চ্যানেলে আন্তর্জাতিক কল শুধু গত এক অর্থবছরে প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ওটিটি (হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো, মেসেঞ্জার ইত্যাদি) কলের বাজার চলতি বছরের শুরুতে ছিল ৮৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৭ লাখ ৩৭ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তবে ওটিটি কলের বাজারে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো অবস্থান নেই। এমন প্রেক্ষাপটে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চালুর সুযোগ সৃষ্টির পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯৯০ কোটি মিনিট, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এটি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২১৩ কোটি মিনিট। অর্থাৎ, এক বছরেই কমেছে প্রায় ৭৭৭ কোটি মিনিট কল। শতাংশের হিসেবে এ সময়ে কল কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ফলে সরকার যেমন আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি এ খাতের ব্যবসাসংশ্নিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে কোম্পানিগুলোর অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়েছে।

ওটিটির একচ্ছত্র দাপট : আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনলাইন 'স্ট্যাটিসটা'র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের শেষে ওটিটি কলের বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর যার আকার ছিল ৬৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালের মধ্যে এর আকার দাঁড়াবে ১৫৮ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। স্ট্যাটিসটার বিশ্নেষণে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে গতিশীল ও সম্প্রসারণশীল বাজার ওটিটি কলের। এর ফলে ২০২৪ সালের মধ্যে সরাসরি ভয়েস কলের বাজার বর্তমানের প্রায় চার ভাগের এক ভাগে নেমে আসবে।

স্ট্যাটিসটার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে বর্তমানে ৩১ শতাংশ বাজার নিয়ে ভয়েস কল ও ভিডিও কলে শীর্ষ পাঁচটি অ্যাপের ওটিটির বাজারে প্রথম অবস্থানে আছে হোয়াটস অ্যাপ। এর পরে ২৫ শতাংশ বাজার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ফেসবুক মেসেঞ্জার, ১৮ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে উই চ্যাট, ১৬ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে ভাইবার এবং ১০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে ইমো। বিশ্বে সার্বিকভাবে সক্রিয় প্রায় ১০৭টি ওটিটি অ্যাপের মধ্যেও এককভাবে ১৮ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে এ সময় শীর্ষে আছে হোয়াটস অ্যাপ। হোয়াটস অ্যাপের সবচেয়ে বেশি আধিপত্য ব্রাজিলে। সেখানে ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ বাজার এককভাবে হোয়াটস অ্যাপের দখলে। এরপরই এর বাজার বিস্তৃত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও নেপালে। এ চারটি দেশে হোয়াটস অ্যাপ ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বর্তমানে হোয়াটস অ্যাপের কলে দৈনিক ভিডিও ও ভয়েস কলের পরিমাণ প্রায় দুই বিলিয়ন মিনিট।

অন্যদিকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রতিদিন কলের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মিনিট, উইচ্যাটের এক বিলিয়ন মিনিট এবং ভাইবারে প্রায় ৯৮০ মিলিয়ন মিনিট।

দেশীয় বাজারে আন্তর্জাতিক কল :আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমাগত ওটিটি কলের আধিপত্য বিস্তৃত হওয়ায় সরাসরি ভয়েস কল কমছে। এক দশক আগেও বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ সরাসরি ভয়েস কলের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেসব দেশে এর বাজার দ্রুত কমছে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ এক অর্থবছরের ব্যবধানে ইনকামিং কল কমেছে ৭৭৭ কোটি মিনিট। এর আগের অর্থবছরগুলোতেও একইভাবে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের পরিমাণ কমেছে। এ সময় আউটগোয়িং কলের সংখ্যাও কমেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দিনে গড়ে বিদেশে কল গেছে পাঁচ কোটি ৪৫ লাখ মিনিট। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেটি কমে নেমে এসেছে তিন কোটি ৩২ লাখ মিনিটে। অর্থাৎ সরাসরি আন্তর্জাতিক আউটগোয়িং কলও কমেছে ২ কোটি ১৩ লাখ মিনিট।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির সমকালকে বলেন, প্রযুক্তির দ্রুত রূপান্তরের ধারায় এটাই স্বাভাবিক। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সরাসরি ভয়েস কল অনেকটাই বিলুপ্ত হবে। ইন্টারনেটভিত্তিক ডাটা কল প্রায় একশ ভাগ বাজারই নিয়ে নেবে। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশকেও সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন, চীন নিজেদের অ্যাপ উই চ্যাট বানিয়ে বিশ্ববাজারে এরই মধ্যে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে। বাংলাদেশ থেকে হয়ত সেভাবে বড় বাজার পাওয়া যাবে না, কিন্তু এখানে যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক কল আসছে এবং দেশ থেকে যাচ্ছে, সেটার বিবেচনায় দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য একটা বড় বাজার তৈরি হয়েই আছে। দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হলে এবং এর নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে, দেশের মোবাইল ফোন ও ল্যান্ডফোনে সহজে সংযুক্ত করা গেলে অবশ্যই প্রবাসী বাংলাদেশিসহ দেশের মানুষ এই অ্যাপ ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।

সুমন আহমেদ সাবির বলেন, এর মাধ্যমে সরকারেরও একটা বড় রাজস্ব আদায়ের পথ তৈরি হবে। এখন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না, যদিও তাদের বাজার এখানে দিন দিন বড় হচ্ছে। সরাসরি আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ কমার সঙ্গে সঙ্গে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ও আনুপাতিক হারে কমছে। ফলে এ খাতে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত রাখতে হলে অবশ্যই দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যেতে হবে। বিটিআরসি অনেক দেরিতে হলেও দুটি প্ল্যাটফর্মকে অনুমোদন দিয়েছে। তবে কঠিন শর্তের কারণে এদের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের লাভজনক বিকাশের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই বিটিআরসিকে বাস্তবসম্মত শর্তের ভিত্তিতে অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ