• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

দুদকের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনীহা

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০১৯  

মাঠ প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসগুলোকে চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য ডিসি সম্মেলনে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে সময় নির্ধারণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে একাধিকবার অনুরোধ করেছে দুদক। তবে দুদকের জন্য আলাদা কোনো অধিবেশন রাখা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে বেশ কয়েকজন ডিসি বলেছেন, এ ধরনের অধিবেশন রাখা হলে ভালোই হয়।

আজ রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবারের ডিসি সম্মেলন বসছে। এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন মাঠ প্রশাসনের ৬৪ ডিসি ও আট বিভাগীয় কমিশনার। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মাঠপর্যায়ের নানা প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা তারা প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরবেন।

উদ্বোধনের পর বাকি অধিবেশনগুলো সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন চলবে ১৮ জুলাই পর্যন্ত। ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং ১টি কার্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে অধিবেশনগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বিভিন্ন জেলার ডিসিদের পাঠানো মোট ৩৩৩টি প্রস্তাব আলোচনা হবে ২৯টি অধিবেশনে।

জানা যায়, প্রধান বিচারপতি, স্পিকার ও তিন বাহিনীর প্রধানরা ডিসিদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য কোনো আগ্রহ প্রকাশ না করলেও ডিসি সম্মেলনে তাদের জন্য সময় রাখা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধিবেশনে অতিথি হিসেবে থাকবেন। তবে দুদক চেয়ারম্যানের নাম অতিথি হিসেবেও রাখা হয়নি।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সমকালকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি শাখা। ফলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্পর্কিত অধিবেশনে দুদকের বিষয়ে আলোচনা হবে। সম্মেলনে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তার অধীন দপ্তর ও সংস্থার বিষয়গুলোর সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরবে।

প্রধান বিচারপতি, স্পিকার ও তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নিজেই উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ, তাদের সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আলোচনার কোনো সুযোগ ছিল না। ডিসি সম্মেলনের মাধ্যমে এবার সেই সুযোগ তৈরি হবে। এখানে জেলা প্রশাসকরা তাদের কার্যক্রম প্রধান বিচারপতি, স্পিকার ও তিন বাহিনীর প্রধানদের কাছে তুলে ধরবেন এবং মতবিনিময় করবেন।

জানা গেছে, ডিসিদের সঙ্গে দুদক চেয়ারম্যানের মতবিনিময়ের জন্য সময় চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমনে নিয়োজিত সংস্থাটি। চিঠিতে বলা হয়েছে, দুদক দেশব্যাপী দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের আপামর জনসাধারণের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা প্রথিত করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্মশালা, গণশুনানি, তথ্যমেলা এবং আকস্মিক পরিদর্শন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুদক আয়োজিত দুর্নীতি প্রতিরোধের বিভিন্ন কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ডিসিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুদকের সঙ্গে তাদের মতবিনিময় করা প্রয়োজন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন দুদক চেয়ারম্যান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। তবে কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে তার নাম ছিল না। এবারও তার নাম নেই।

দুদকের এক মহাপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, মাঠ প্রশাসনে দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এর সুফল আসছে না। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনার পরও জেলা-উপজেলার অফিসগুলোতে দুর্নীতির কারণে সরকারি সেবা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে মাঠ প্রশাসনে দুর্নীতির আখড়া অফিসগুলোকে চিহ্নিত করে শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে চায় দুদক। কিন্তু মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ডিসিদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাওয়া যায় না। এটি কার্যকর করতে হলে ডিসিদের সহযোগিতা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে ডিসি সম্মেলনে তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে একাধিকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিসি সম্মেলনে দুদকের জন্য আলাদা কোনো অধিবেশন রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১০ জনের বেশি ডিসি সমকালকে বলেন, দুদকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডিসিরা কাজ করলে সহজেই দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে। কারণ, জেলা-উপজেলার প্রায় সব অফিস জেলা প্রশাসকদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিভিন্ন বিষয়ে গঠিত কমিটির সভাগুলোতেও সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসকরা।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ