• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

অনুমোদনহীন ক্যাসিনো বোর্ড এলো কীভাবে?

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ক্লাবগুলোতে অনুমোদন ছাড়াই চলেছে অবৈধ ক্যাসিনো বা জুয়ার ব্যবসা। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় হওয়ার কারণে প্রশাসন জেনেও ছিলো নীরব। এ ব্যবসার মাসোহারা গেছে রাজনৈতিক পদধারী নেতা থেকে শুরু করে প্রভাবশালীদের পকেটে। 

ক্লাব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে। তারা বলছেন, অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিষয়টি স্থানীয় লোকজনও জানতো। তবে প্রভাবশালীদের কারণে প্রশাসনের কাছে কেউ কখনই মুখ খুলেনি। 

এদিকে অনুমোদন না থাকলেও ঢাকার ক্যাসিনো বোর্ডগুলো কোন দেশ থেকে কীভাবে এলো এনিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিছু বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। 

তবে ধারণা করা হচ্ছে, অন্য কোনো পণ্য আমদানির ঘোষণা দিয়ে কিংবা চোরাই পথে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আনা হয়ে থাকতে পারে। এর সঙ্গে প্রভাবশালী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকারকর্মীসহ সচেতন মহল। 

মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এটি কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের হওয়ার মতো ঘটনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন আসছে এগুলো কোথায় থেকে আসলো, কারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত। এসবের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িয়ে যায়। একটি হলো- আইনে নাই। কিন্তু সেটা এলো কীভাবে? 

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, এর পাহারায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা দিয়েছে। যা বিভিন্ন মিডিয়ায়ও এসেছে। এটা কীভাবে হয়? এখনই এগুলোর তদন্ত করে বের করা দরকার এবং তদন্ত করে কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা। 

‘মানুষ যেন দু’জনকে দেখে ৫০ জনকে রিলিজ করে না দেয়। এর সঙ্গে যারা জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে তারা বিভিন্ন ফাঁক-ফোকরের মধ্য দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।’

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আমরা তো মানুষ, মানুষ হিসেবে সব সময় আমরা একটু মানবিক থাকি। এর জন্য তারা চেষ্টা করবে আমাদের মানবিক দিক থেকে দুর্বল করতে। তাই এই জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত নিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে সবাইকে আইনের আওতা আনতে হবে। 

তিনি বলেন, ঢাকায় ক্যাসিনো কীভাবে এলো কাস্টম অথরিটিকে এর জবাব দিতে হবে। এর দায় তারা এড়াতে পারে না। এটা কোথায় থেকে এলো, কারা আনলো? তারা যদি কাস্টমস ফাঁকি দেয় এজন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। 

‘আর যদি কাস্টমস অথরিটি কারও যোগসাজশে এসে থাকে এটিও তদন্ত করে বিস্তারিত বের করা দরকার এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ক্লাবের সাবেক কর্মকর্তা বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন আগেই ঢাকায় ক্যাসিনো গড়ে উঠেছে। এগুলোতে জুয়া খেলার যেসব সরঞ্জাম রয়েছে তা অবৈধ পন্থায় বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। আর যেসব বিদেশি এগুলো পরিচালনা করতেন তারাও প্রভাবশালীদের ছায়ায় থাকতেন। 

এ বিষয়ে একাধিকবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভি করেননি। 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীর গুলিস্তান, ফকিরাপুল, বনানী ও মতিঝিলের বিভিন্ন ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে কাজ করছে পুলিশও, যা এখনও অব্যাহত।

এদিকে চলমান এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের উপনেতা জিএম কাদের। 

তিনি বলেন, শুরু থেকেই সব বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা চাই পুরো বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হোক এবং তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত হোক। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ