• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউস

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৯  

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শন সুনামগঞ্জ পুরোনো সার্কিট হাউস। ব্রিটিশ স্থাপত্য শিল্পের অনুসরণে কাঠের পাটাতনের উপর নির্মিত টিনশেড দিয়ে ভবনটি নির্মিত। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সামনে এই সার্কিট হাউসটির অবস্থান। 

সুনামগঞ্জ মহুকুমার দর্শনীয় ও অন্যতম কয়েকেটি ভবনের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। এক সময় নান্দনিক শোভায় ভবনটি মানুষকে আকৃষ্ট করতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীন হওয়ার পথে এই সার্কিট হাউজ।

তবে সুনামগঞ্জের কৃতিসন্তান বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটিকে সংরক্ষণ করে এটিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি চিঠি দিয়েছেন।

জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বৃটিশ শাসনামলে নির্মিত সুনামগঞ্জের পুরোনো সার্কিট হাউসটি সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাময়িক অবস্থানের জন্য নির্মিত হয়েছিলো। মূলত বৃটিশ শাসনকে তৃণমূলে সুদৃঢ় করতে এই সার্কিট হাউসটি নির্মিত হয়েছিল। 

ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পাকিস্তান পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই সার্কিট হাউসটি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও আমলাদের সেবায় নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধে পুরাতন সার্কিট হাউসটি স্বাধীনতার স্মৃতিবিজরিত প্রতীক চিহ্ন ও এ অঞ্চলের প্রশাসনিক ঐতিহ্যের নিদর্শন।

তারা আরো জানান, স্বাধীনতা সংগ্রামে সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসটি তৈরি হয়। পাকিস্তানী বাহিনির প্রথম সামরিক দলটি বাঙালি ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতৃত্বে শহরে এসে এই সার্কিট হাউসেই আস্তানা গেড়েছিলো। তখন স্বাধীনতাকামী বীরদের ক্ষোভের সঞ্চার হয়ে উঠে। এই সার্কিট হাউসকে ঘিরেই পাকিস্তানি সামরিক প্রস্তুতির বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধটি শুরু হয়। 

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম প্রহরেই ২৭মার্চ সুনামগঞ্জের যোদ্ধারা সার্কিট হাউসটি চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। সাধারণ জনতার পাশাপাশি অস্ত্র হাতে ওই প্রতিরোধে আনসারবাহিনীও যোগ দেন। এদেরই একটি দল এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে সার্কিট হাউস লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া শুরু করে। এ সময় পাকিস্তানী বাহিনীও পাল্টা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। তাদের ছোঁড়া গুলি বিদ্ধ হয়ে বালিকা বিদ্যালয়ে অবস্থান নেয়া আনসার আবুল হোসেন শহীদ হন। এছাড়াও জুবিলী স্কুলের সামনে দিয়ে একটি মিছিল সার্কিট হাউস অতিক্রমের সময় গনেশ নামে একজন রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হন। তা প্রতিরোধের প্রথম দিনই পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন তারা। 

স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের পর সুনামগঞ্জে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জামালগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফেনারবাঁক গ্রামের কৃতি সন্তান মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও দিরাইয়ের কৃতিসন্তান মুক্তিযোদ্ধা সুজাত চৌধুরী। 

শিক্ষার্থী শহীদুল ইসলাম সুমন,সাকুরা আক্তার সুমাসহ অনেকেই জানান, যতই দিন যাচ্ছে এই সার্কিট হাউসটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠছে। কারণ নতুন সার্কিট হাউস নির্মিত হওয়ায় এই ঐতিহাসিক সার্কিট হাউসটি সংরক্ষণে প্রশাসনিক নজরদারী না থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীনের পথে। ব্যবহার অনুপোযোগী হওয়ার আগেই ঐতিহাসিক সুনামগঞ্জের পুরোনো সার্কিট হাউসটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে সুনামগঞ্জের একটি পুরোনো নিদর্শন কালের পরিক্রমায় বিলীন হওয়ার পথ থেকে বেঁচে যাবে।

তাই জেলার বিশিষ্টজনরা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ স্থাপনাটি নতুন আঙ্গিকে সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। 

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ