• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

মহাজোটে আসন ভাগাভাগি

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮  

মহাজোটে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ৭০টি আসন চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তালিকা দিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে দর-কষাকষি করে ঢাকা মহানগরীতে ৬টিসহ ৪০ থেকে ৪৫টি আসনে ছাড় পাওয়ার প্রকৃত টার্গেট নির্ধারণ করেছে দলটি। যদিও জাপার দায়িত্বশীল নেতাদের দাবি, তারা কমপক্ষে ৫০টি আসন পেতে চান। আর বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও দলটির নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২২ আসন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তালিকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিকল্পধারার টার্গেট অন্তত ১০টি আসন পাওয়া।

আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজ দল-জোটের পক্ষে লিয়াজোঁ করছেন, জাপার ও বিকল্পধারার এমন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একাধিক নেতা ইত্তেফাককে জানান, উভয় দল-জোটকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মুখ দেখে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এলাকায় যারা জনপ্রিয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে যারা জিতে আসতে পারবেন-এমন লোকদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ এক্ষেত্রে আসন ওয়ারি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জরিপের রিপোর্টও বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জাপা ও বিকল্পধারার নেতাদের জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৪ দল ও মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়ে ইতোমধ্যে মৌখিক সমঝোতা হয়েছে। আগামী রবিবারের মধ্যে মহাজোটের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হতে পারে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমদিকে সিদ্ধান্ত ছিল জাপাকে ২৫ থেকে ৩০টি আসনে ছাড় দেওয়ার। তবে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে এই সংখ্যা ধীরলয়ে বাড়ছে। একই সমীকরণ বিকল্পধারা কিংবা যুক্তফ্রন্টের ক্ষেত্রেও। আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল- যুক্তফ্রন্টকে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫টি আসন ছাড়ার। তবে বিকল্পধারার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ইত্তেফাককে জানান, সংখ্যা আরও বাড়বে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রাপ্ত সর্বশেষ খবরাখবর অনুযায়ী, আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার ও বিকল্পধারার দর-কষাকষি চলমান।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের চাপ এড়াতে জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ নিজের সবগুলো মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। বারিধারায় ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’-এ নিজ বাসায় নিরিবিলি অবস্থান করছেন তিনি। দলের ৩-৪জন নেতা ছাড়া আর কারও তার বাসায় বর্তমানে প্রবেশাধিকার নেই। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে মঙ্গলবার এরশাদ বলেছেন, ‘দলের প্রার্থী তালিকা আমিই চূড়ান্ত করব। প্রেসিডিয়াম বৈঠকে আমাকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ভোটের প্রয়োজনে কোনও জোটে যেতে হলে সেই সিদ্ধান্তও আমিই নেব। প্রথমে আমি দলের তিনশ আসনে প্রার্থী ঠিক করব, তারপর জোটগত প্রার্থী ঠিক করা হবে। আমার সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে। তোমরা আমার ওপর আস্থা রাখো।’

এর আগে এরশাদ বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে আমরা একশ আসন চাইবো, ৭০টার মতো তো পাবোই।’ এরশাদের সহোদর ও জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, একশ আসনের তালিকা নিয়ে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর-কষাকষি শুরু করবো। আশা করি শেষ পর্যন্ত সম্মানজনক আসনে ছাড় পাব।’ জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ইত্তেফাককে বলেন, আসনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার কথাবার্তা চলছে, আশা করি সম্মানজনক আসনই আমরা পাব।

জাপা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান দশম সংসদে দলের যারা সংসদ সদস্য রয়েছেন-দু’চারজন ছাড়া বাকি সবাইকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। এব্যাপারে আওয়ামী লীগেরও সবুজ সংকেত রয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগের কাছে ছয়টি আসন দাবি করছে জাপা। এরমধ্যে দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের জন্য ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট), জিএম কাদেরের জন্য ঢাকা-১৮ (উত্তরা-খিলক্ষেত), কাজী ফিরোজ রশীদের জন্য ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর), সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার জন্য ঢাকা-৪ (শ্যামপুর), মীর আবদুস সবুর আসুদের জন্য ঢাকা-৫ (যাত্রাবাড়ি-ডেমরা) এবং শফিকুল ইসলাম সেন্টুর জন্য ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুরের আদাবর) আসনটি পেতে চায় জাপা।

এরমধ্যে ঢাকা-১৭ আসনে নবম সংসদের সদস্য ছিলেন এরশাদ। এই আসনে এবার এরশাদকে আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। লালমনিরহাট-৩ আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৮ আসনেও লড়তে চান জিএম কাদের। এনিয়ে মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কথাও বলেছেন তিনি। এসময় ঢাকা-১৮ আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনও উপস্থিত ছিলেন। সূত্রমতে, ঢাকা-১৮ আসনে ছাড় পাওয়ার বিষয়ে জিএম কাদের এখনও নিশ্চয়তা পাননি, তাকে লালমনিরহাটেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ঢাকা-১৭ ছাড়াও রংপুর-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করতে চান এরশাদ। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত যে কোনও দুটি আসনে এরশাদকে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে রংপুর-৩ আসনে তাকে ছাড় দেওয়া হবে। আর ঢাকা-১৭ ও ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হয়েছে।

কুমিল্লা-২ ও ঢাকা-১ আসনটি নিয়ে বড় ঝামেলা দেখা দিয়েছে। কুমিল্লা-২ আসনে এবার ব্যবসায়ী আবদুল মাতলুব আহমেদের স্ত্রী সেলিমা আহমেদকে দলীয় মনোনয়ন দিতে চায় আওয়ামী লীগ, আর ঢাকা-১ আসনে (দোহার-নবাবগঞ্জ) শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের।

বিকল্পধারা ও যুক্তফ্রন্ট

বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক করেন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে বিকল্পধারাসহ যুক্তফ্রন্টের ২২জনের একটি তালিকা দেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২২ জনের কাকে কী কারণে মনোনয়ন দেওয়া যায় সেটির পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুক্তি ও ব্যাখ্য তুলে ধরেন বি. চৌধুরী। জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, ‘আপনার তালিকা আমি রাখলাম। তবে আমাদের কাছে বিভিন্ন সার্ভে রিপোর্ট রয়েছে। আমি সেগুলো মিলিয়ে দেখব। নতুন করে আবার খোঁজখবর নেব। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী তাদের বিষয়টি আমরা অবশ্যই বিবেচনা করবো।’

বিকল্পধারা সূত্রে জানা গেছে, বি. চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-৩ আসন (সদর-গজারিয়া) থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও তিনি আসলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তেমন আগ্রহী নন। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান নোয়াখালী-৪ আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে বলা হয়েছে মেজর মান্নানকে।

মহাজোটে যোগদান ও আসনের বিষয়ে আলোচনার জন্য অধ্যাপক বি. চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল রাতে রাজধানীর বাড্ডায় বিকল্পধারার নির্বাচনী কার্যালয়ে যুক্তফ্রন্টের বৈঠক হয়েছে। জানা গেছে, আপাতত বিকল্পধারা কিংবা যুক্তফ্রন্টের কোনো প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে না।

এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় বিকল্পধারার নির্বাচনী কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাত্কার গ্রহণ শেষে সাংবাদিকেদের উদ্দেশে বি. চৌধুরী বলেছেন, ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় আমাদের যদি আপস করতে হয়, তাহলে যে দলটি সরকার গঠন করবে সে দলের শরিকদের অধিক সংখ্যক আসন দিয়ে ব্যালেন্স করতে হবে। মহাজোটের কাছে কয়টি আসন চান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নেব উত্তরে বি. চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে এটা বলবো না। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের জোটেও ভালো ভালো প্রার্থী রয়েছেন। আমরা আলোচনায় সেসব কথা জানিয়েছি।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ