• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

বদরগঞ্জের সেই ধর্ষক-স্বামী গ্রেপ্তার

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

বদরগঞ্জের সেই ধর্ষক-স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নির্যাতিত অষ্টমশ্রেণি পড়ুয়া মেয়েটি নিজে বাদি হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ গত সোমবার গ্রেপ্তার করে স্বামী প্রকাশ চন্দ্র রায়কে। প্রকাশ বর্তমানে জেল হাজতে আছেন।

প্রায় পাঁচ মাস আগে অষ্টমশ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে রংপুরের বদরগঞ্জ থানার প্রকাশ চন্দ্র রায়। এতে সেই কিশোরী অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। গ্রাম্য সালিশের রায়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে বাধ্য হন ধর্ষক। বিয়ের ১২ দিন পর যৌতুকলোভী ধর্ষক-স্বামী আরেকটি বিয়ে করেন। সতীনের সংসারে যায়গা হয় না মেয়েটির। স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয় পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা সেই কিশোরী।

এ ঘটনায় মেয়েটির দিনমজুর বাবা চিতু বর্মণ বদরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শুরুতে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি থানা পুলিশ। পরে মেয়েটি নিজেই বাদি হয়ে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করে।

মেয়েটির মামা বলেন, ‘হিন্দু ধর্ম মতে মেয়েদের একবারই বিয়ে হয়। সে কথা চিন্তা করে আমরা প্রকাশের সাথে মেয়েটির বিয়ে দেই। কিন্তু প্রকাশ অন্যত্র বিয়ে করে আমার ভাগ্নিকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিযেছি। আইন অনুযায়ী যে বিচার হবে তা আমরা মেনে নেব।’

বদরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আরিফ আলী জানান, মেয়েটি ধর্ষণের মামলা না করে যৌতুকের মামলা করেছে। যৌতুকের মামলায় প্রকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওই এলাকার দিনমজুর চিতু বর্মণের তিন মেয়ে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। পড়াশোনায় প্রবল আগ্রহ থাকায় মেঝ মেয়েকে রাজারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি ও ছোটমেয়েকে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। বিষয়টি নিয়ে রোষ দেখান প্রতিবেশী নারায়ন চন্দ্র রায়ের ছেলে প্রকাশ চন্দ্র রায়। অকারণেই চিতু বর্মণের পরিবারটিকে ক্ষতি করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি।

পাঁচ মাস আগে বাড়ি ফাঁকা থাকায় বরই দেওয়ার কথা বলে মেয়েটিকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেন তিনি। সেখানে তার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি। বিষয়টি জানাজানি হলে মেরে ফেলানোর ভয় দেখান। পরিবারেরও ক্ষতি করা হবে বলে সাশানো হয়। মেয়েটি বিষয়টি চেপে যায়। কিন্তু কয়েক মাস পর তার শরীরে পরিবর্তন আসতে থাকে। পেটের আকার বদলে যেতে থাকলে বিষয়টি জানাজানি হয়। চিকিৎসকরা মেয়েটির মা-বাবাকে জানিয়ে দেন সে পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা।

দিনমজুর বাবা উপায় না পেয়ে সমাজপতিদের দ্বারস্থ হন। স্থানীয়ভাবে আয়োজিত এক সালিশ বৈঠকে ধর্ষক প্রকাশ নিজের দোষ স্বীকার করে নেন। সমাজপতিরা মেয়েটিকে তার সাথে বিয়ে দেয়ার মতামত প্রদান করেন। সমাজপতিদের মতামত অনুযায়ী ৪ আগস্ট ঘটা করে প্রকাশ ও মেয়েটির বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা যৌতুক নির্ধারণ হয়। দিনমজুর চিতু বর্মণ একটি দুধেল গাভী বিক্রি করে বর পক্ষকে ৩০ হাজার টাকা দেন। বাকী ১ লাখ টাকা দিতে প্রকাশের বাবা-মার কাছে সময় চেয়ে নেন।

বিয়ের আসরে প্রকাশ ও তার বাবা-মা কোনো অমত করেননি। তারা নববধূকে বাড়িতে তোলেন। দুয়েকদিন পরেই যৌতুকের বাকী ১ লাখ টাকা দিতে চিতু বর্মণকে চাপ দেওয়া হয়। অসহায় দিন মজুরের পক্ষে চাওয়ামাত্র টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য অন্তঃস্বত্ত্বা মেয়েটির ওপর নির্যাতন চালান প্রকাশ ও তার পরিবার।

নির্যাতন সহ্য করে কিশোরী মেয়েটি শ্বশুর বাড়িতেই পড়ে থাকে। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। বিয়ের ১২ দিন পর স্বামী প্রকাশ চন্দ্র রায় আরেকটি বিয়ে করেন। নতুন স্ত্রীকে ঘরে তুলে অমানবিক নির্যাতন করে অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বর্তমানে মেয়েটি বাবার বাড়িতে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ