• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

হাজারীবাগের ‘অপহরণ-হত্যা নাটকে’ পুলিশের ভূমিকার তদন্ত হচ্ছে

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ঢাকার হাজারীবাগ থেকে এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যা মামলায় তিন জনের বিচরের শেষ পর্যায়ে এসে সেই শিশুর জীবিত ফেরার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ওই ঘটনায় কার গাফলতি ছিল তা তদন্ত করে দেখে দ্রুত পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশকে ।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপ কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই বিস্তারিত জানা যাবে। পুলিশের কোনো সদস্য যদি অপরাধ করে থাকে, তাহলে কোনোভাবেই ছাড় পাবে না।”

২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু সাইদ হারিয়ে গেছে উল্লেখ করে হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ওই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৭ জুলাই বরিশালের হিজলা থেকে সোনিয়া আক্তার তার ভাই আফজাল, ফুপাতো ভাই সাইফুল এবং আত্মীয় শাহিন রাজিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, শিশুটিকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার চারজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে হাজির করা হলে আফজাল ও সাইফুল ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তাদের দুজনের দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে ডিবি সে সময় জানায়, শিশুটিকে বরিশালগামী লঞ্চ থেকে মেঘনা নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত শেষে ওই চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন ডিবির এসআই রুহুল আমিন।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এ বিচারাধীন এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ৫ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রয়েছে। কিন্তু তার আগেই হাজারীবাগ থানা পুলিশের এক তদন্তে জানা যায়, শিশুটিকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনাটি সাজানো, শিশুটি বেঁচেই আছে।

পুলিশ এখন বলছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে সোনিয়ার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য আবু সাঈদকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিল। আর সোনিয়া বলছেন, এই নাটকের পেছনে রয়েছেন তার সাবেক স্বামী মিরাজ হোসেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এ মামলায় আমিসহ অন্যরাও দীর্ঘ প্রায় তিন বছর কারাভোগ করেছি। আমি এবং আমার ভাই ও অন্য স্বজনদের ডিবি অফিসে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা তাদের শিখিয়ে দেওয়া স্বীকারোক্তি আদালতে দিতে বাধ্য হয়েছি।”

সোনিয়া ইতোমধ্যে একটি মামলাও করেছেন। সেই মামলায় শিশুটির বাবা-মাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ।

হাজারীবাগ থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোনিয়া আক্তারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রুহুল আমীন তাদের নানাভাবে নির্যাতন করে আফজাল ও সাইফুলের জবানবন্দি নেয়।”

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বর্তমানে ডেমরা থানায় কর্মরত এসআই রুহুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি কোনো ভুল করিনি। কাউকে নির্যাতনও করা হয়নি। আদালতের নির্দেশনা মেনেই তদন্ত হয়েছে। আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছে, সে অনুযায়ি চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।”

কিন্তু মৃতদেহ না পেয়ে বা মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে হত্যা মামলায় কীভাবে অভিযোগপত্র দিলেন- এই প্রশ্নের উত্তরে এসআই রুহুল আমীন বলেন, তিনি আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে ‘ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে’ অভিযোগপত্র দিয়েছেন।

“আমি ধরেই নিয়েছি, নদীতে ফেলে দেওয়ার পর শিশু আবু সাঈদ মারা গেছে।”

সোনিয়ার করা অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জবানবন্দির জন্য নির্যাতন করা অন্যায়। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে সোনিয়ার করা মামলায় ১৫ বছর বয়সী সাঈদ, তার বাবা মোহাম্মদ আজম, মা মাহিনুর বেগম এবং আত্মীয় আব্দুল জব্বারকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি।

পরে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে হাজারীবাগ থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া জানান।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ