• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

চকবাজার ট্র্যাজেডি: হস্তান্তর করা হলো আরও ৮ মরদেহ

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০১৯  

রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ১১ জনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৮টি মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বুধবার (৬ মার্চ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ঢাকা) শফিকুল ইসলাম  জানান, ডিএনের মাধ্যমে ১১টির মরদেহ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৮টি হস্তান্তর করছি। বাকীগুলো স্বজনরা নিতে এলে সঙ্গে সঙ্গে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।মরদেহের দাফন-কাফনের জন্য স্বজনদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।

এ সময় মর্গে উপস্থিত আছেন চকবাজার থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।

১১ মরদেহ শনাক্ত হওয়ার দু’জনের মধ্যে একজন হলেন শাহীন আহমেদ (৪৫)। তিনি পরিবার নিয়ে চুড়িহাট্টা এলাকায় থাকতেন।

তার স্ত্রী ময়না আক্তার  জানান, তার স্বামী মসজিদে নামাজে আদায়ের জন্য বাসা থেকে বের হন। পরে  তিনি আগুনে পুড়ে মারা যান। ছেলে ও মেয়ে ডিএনের নামুনা নিয়ে পরীক্ষার পর তার স্বামীর মরদেহ শনাক্ত হয়েছে।

এদিকে আগুনে নিহত রিকশাচালক নুরুজ্জামান (৪২) রিবার নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়ায়।

তার স্ত্রী শিরিন আক্তার  জানান, ঘটনার দিন রিকশা নিয়ে চুড়িহাট্টায় জ্যামে পড়েছিলেন তার স্বামী। সেখানে লাগা আগুনে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। পরে তার ছেলের ডিএনের নমুনা পরীক্ষার পর তার স্বামীর মরদেহ শনাক্ত হয়।

চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ফাতেমা-তুজ-জোহরা বৃষ্টি (২১) ডিএনএ’র মাধ্যমে মরদেহ শনাক্ত করেন তার পরিবার। নিহত বৃষ্টি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

তার মা শামসুন্নাহার  জানান, ঘটনার সময় একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি শেষ করে রিকশাযোগে তার বান্ধবীকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে ওই সে আগুনে পুড়ে মারা যায়।

তিনি আরও জানান, বৃষ্টির বাবার নাম জসিম উদ্দিন তারা লালবাগ পোস্তা ফাড়ির গলি এলাকায় থাকে।চকবাজারের ঘটনার ঠিক আধাঘণ্টা আগে তার মায়ের সঙ্গে মোবাইলে তার কথা হয়। তখন বৃষ্টি জানিয়েছিলো তার আধাঘন্টা সময় লাগবে বাসায় আসতে। তুমি চিন্তা করো না তারপরে থেকে তার যোগাযোগ বন্ধ অবশেষে ছোট ভাই, মায়ের ডিএন’র নমুনার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় বৃষ্টির মরদেহ।

এর আগে বুধবার সকালে নিহতদের মধ্যে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ১১ জনের মরদেহ শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিচয় শনাক্তে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে ৬৭টি মরদেহ থেকে ২৫৬টি (রক্ত, টিস্যু, হাড় ও বাক্কাল সোয়াব) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি বিচ্ছিন্ন পৃথক হাতকে পৃথক আলামত হিসেবে গণ্য করে সেটি থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর ফলে মোট সংগৃহীত নমুনার পরিমান দাঁড়ায় ২৫৭টি।

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থাপিত অস্থায়ী বুথের মাধ্যমে মরদেহের দাবিদারদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়।

সর্বশেষ রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ৩৮ স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। অশনাক্তদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সিআইডির ফরেনসিক টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে।

চলতি বছরের বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জন পুড়ে মারা যায়। পরে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৭১ জনে।

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ