• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দৈনিক গোপালগঞ্জ

যশোর স্টেশন থেকে ৩১ যাত্রী নিয়ে ছাড়লো বন্ধন এক্সপ্রেস

দৈনিক গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০১৯  

যশোর স্টেশন থেকে ৩১ যাত্রী নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছে 'বন্ধন এক্সপ্রেস'। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুরে খুলনা থেকে ছেড়ে এসে দুপুর আড়াইটায় আন্তর্জাতিক এ ট্রেনটি যশোর স্টেশনে এসে থামে, প্রথমবারের মতো এ স্টেশনে তিন মিনিটের যাত্রা বিরতি দেয়। 

যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী এ স্বপ্নের ট্রেনে উঠতে আগেভাগেই স্টেশনে পৌঁছান যাত্রীরা। এছাড়াও স্থানীয় নাগরিক ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে কাজ করা একাধিক নেতা-সাধারণ মানুষ ভিড় করেন স্টেশনে।

যশোর স্টেশন থেকে টিকিট নেওয়া প্রথম যাত্রী ফজলুল হক বলেন, নিজ শহর থেকে ট্রেনে উঠে চার ঘণ্টায় সরাসরি কলকাতা যাচ্ছি, এটা সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি। প্রথম ট্রেনের টিকিট কেটে, প্রথমদিন যাচ্ছি, এটা যেন কালের সাক্ষীর মতো, এ কারণে আরও বেশি ভালো লাগছে।

বন্ধন ট্রেনের যাত্রী যশোর শহরের বেজপাড়ার বিপ্লব সাহা বলেন, উভয় দেশের সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। প্রথমদিনেই আমি ছাড়াও চার ব্যবসায়ী বন্ধু সাহিদুর রহমান টিটো, আমিরুজ্জামান, নিজাম উদ্দিন ও মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ একসঙ্গেই কলকাতা যাচ্ছি।

টিকিটের মূল্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে এই পাঁচ যাত্রী  বলেন, সবকিছুকে টাকার সঙ্গে তুলনা করে তো সুবিধা পাওয়া অসম্ভব। যেমন, যশোর শহর থেকে ভাঙাচোরা রাস্তায় বেনাপোল, এরপর দালালদের অত্যাচার, দুই দেশের কাস্টমস-ইমিগ্রশনে বিশাল লাইন, ওপারে গিয়ে ছোট্ট ট্যাক্সিতে চেপে বনগাঁ, তারপর আবার সাধারণ ট্রেন ধরে কলকাতা যাওয়া আর সরাসরি এসি ট্রেনে কলকাতা পৌঁছানো এটাকে টাকা দিয়ে মেলানো কখনও সম্ভব না। বিশেষ করে বয়স্ক কিংবা রোগীদের ক্ষেত্রে এই ট্রেন একমাত্র অবলম্বন বলা যেতে পারে। আর এটা দুই দেশের সরকারের সৌহদ্যপূর্ণ সম্পর্ক আর ঐকান্তিক ইচ্ছার কারণেই সম্ভব হয়েছে।

দীর্ঘদিন যশোরে স্টপেজ এবং টিকিট বরাদ্দের দাবি আদায় নিয়ে কাজ করা 'নাগরিক অধিকার আন্দোলন' কোর কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এটা যশোরবাসীর জন্য অন্যরকম বিজয়। দীর্ঘ ৫৫ বছর পরে আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চে আবারও যশোর থেকে সরাসরি কলকাতা ট্রেন চালু হলো। ইতোমধ্যে রেলমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী জুনের আগেই ঢাকা থেকে যশোর-বেনাপোলে একটি বিশেষ ট্রেন, এবং সিডিউল বাড়িয়ে সপ্তাহে চারদিন খুলনা-কলকাতা রুটে ট্রেন চলবে। উভয় ট্রেনে পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দ পাবে যশোরের মানুষ।

ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্সের সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান  বলেন, আমরা আশা করছি শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে যশোরের মানুষ সর্বোচ্চ রেলওয়ে সুবিধা পাবে। আর কলকাতার সঙ্গে গত ৫ বছরে যে অভূতপূর্ব যোগাযোগ সুবিধা, ভিসা সহজীকরণ হয়েছে তা আরও বহুগুণে বাড়বে।

যশোর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার পুস্পল কুমার চক্রবর্তী  বলেন, সরকারের এই নন্দিত পদক্ষেপে খুশি হয়েছেন যশোরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ। প্রথমদিনেই ২৪টি চেয়ারে এবং সাতটি কেবিন টিকিটের ৩১ যাত্রী কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আশা করছি, স্টপেজ চালু হওয়ার খবর জনসাধারণ জানতে পারলে টিকিট বিক্রি বাড়বে। 

তিনি আরও জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩০ মিনিটেই বন্ধন এক্সপ্রেস যশোর স্টেশনে যাত্রী নামাতে তিন মিনিটের যাত্রাবিরতি  করে খুলনার উদ্দেশে রওনা হবে এবং দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে যশোরে ফিরে কলকাতাগামী যাত্রী ওঠাতে তিন মিনিটের বিরতি দিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হবে। 

এদিকে, বন্ধন এক্সপ্রেসের যশোর স্টেশনে যাত্রাবিরতির উদ্বোধনী দিন উপলক্ষে ঘরোয়া পরিবেশে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাগরিক আন্দোলন। এদিন রেলওয়ে কর্মকর্তা, কলকাতাগামী ৩১ যাত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা এবং মিষ্টিমুখ করান সংগঠনের নেতারা। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার, রেলওয়ে পশ্চিম বিভাগীয় চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট এ এম এম শাহনেওয়াজ, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম, রাজশাহী), ডিসিও পাকশী, যশোরের স্টেশন মাস্টার পুস্পল কুমার চক্রবর্তী, নাগরিক আন্দোলন কোর কমিটির কো-অর্ডিনেটর শেখ আসাদুজ্জামান মিঠু, ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্সের সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, নারীনেত্রী ও ভাইস চেয়ারম্যান সেতারা খাতুন, রেলওয়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শামীম আহম্মেদ প্রমুখ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যশোর থেকে কলকাতা সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ ছিলো। এরপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা (চিৎপুর স্টেশন) রুটে ৪৫৬ আসনবিশিষ্ট ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার চালু হলেও যশোরে কোনো স্টপেজ ছিলো না। এজন্য যশোরের বিভিন্ন সংগঠন স্টপেজ এবং সিট বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছিলো। বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শেষে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যশোরে স্টপেজ দিতে সম্মতি প্রকাশ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন যশোর স্টেশন মাস্টারকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে জানানো হয়েছে, যশোরের মানুষের জন্য ২০০টি আসন বরাদ্দ থাকবে। এছাড়াও আপ এবং ডাউন ট্রেনে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য তিন মিনিট যাত্রা বিরতি থাকবে যশোর স্টেশনে। 

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক গত সোমবার (৪ মার্চ) থেকেই সরাসরি যশোর রেলওয়ে জংশন এবং অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। 

আন্তর্জাতিক রুটের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ‘বন্ধন এক্সপ্রেসে’ কেবিনে দেড় হাজার ও চেয়ারের জন্য এক হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে উভয় টিকেটের যাত্রীদের ভ্রমণ ট্যাক্স বাবদ আরও ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। 

বেনাপোল চেকপোস্টে অবস্থিত বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. সাইদুজ্জামান বলেন, ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ চালু হওয়া থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছর আড়াই মাসে উভয় দেশের ১৫ হাজার ৫৭৯ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে কলকাতা থেকে খুলনা এসেছেন ৬ হাজার ৭৪৫ জন এবং খুলনা থেকে কলকাতায় গেছেন ৮ হাজার ৮৩৪ জন।  

দৈনিক গোপালগঞ্জ
দৈনিক গোপালগঞ্জ